ভারতের ভূপ্রকৃতি [India: Physical Environment] পর্ব - ০১ [Part - 01]

ভারতের ভূপ্রকৃতি 

[০১] উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল [The Northern Mountainous Region]

[০২] উত্তরের সমভূমি অঞ্চল [The Plains of North India] 


[০১] ভারতের উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল
ভারতের উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল বলতে প্রধানত হিমালয় পর্বতমালাকে বোঝায়, যা বিশ্বের উচ্চতম এবং নবীনতম ভঙ্গিল পর্বতশ্রেণী। এটি ভারতের জলবায়ু, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতিতে এক গভীর প্রভাব ফেলে। এই অঞ্চলের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে দেওয়া হলো
অবস্থান ও বিস্তার
ভারতের উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলটি উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব অংশে প্রায় 2,500 কিলোমিটার দীর্ঘ একটি ধনুকাকৃতির এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। পশ্চিমে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের নাঙ্গা পর্বত শৃঙ্গ [8,126 মি] থেকে পূর্বে অরুণাচল প্রদেশের নামচাবারওয়া [7,756 মি] পর্যন্ত এর বিস্তার। উত্তর – দক্ষিণে এর গড় প্রস্থ প্রায় 150 কিলোমিটার থেকে 400 কিলোমিটার, যা পশ্চিমে বেশি এবং পূর্বে কম।
উত্তর-দক্ষিণ বা প্রস্থ বরাবর হিমালয়ের শ্রেণিবিভাগ
উচ্চতা এবং ভূতাত্ত্বিক গঠনের ভিত্তিতে হিমালয়কে উত্তর থেকে দক্ষিণে চারটি প্রধান সমান্তরাল শ্রেণীতে ভাগ করা যায়:
[ক] ট্রান্স হিমালয় (Trans Himalaya)
এটি হিমালয়ের সবচেয়ে উত্তরের অংশ। এর গড় উচ্চতা প্রায় 3,000 - 5,000 মিটার। এই অঞ্চলে কারাকোরাম, লাদাখ, এবং জাস্কার পর্বতশ্রেণীগুলি অবস্থিত। ভারতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ গডউইন অস্টিন (K2) [8,611 মি] কারাকোরাম পর্বতমালার অংশ। এই অঞ্চলটি মূলত ঠান্ডা মরুভূমি প্রকৃতির এবং অত্যন্ত শুষ্ক।
[খ] হিমাদ্রি হিমালয় (Himadri Himalaya) বা বৃহত্তর হিমালয় (Greater Himalaya)
এটি হিমালয়ের প্রধান এবং সবচেয়ে উঁচু অংশ। মূলত রূপান্তরিত শিলা দ্বারা গঠিত এই অঞ্চলটির গড় উচ্চতা প্রায় 6,000 মিটার। বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট [8,848 মি], কাঞ্চনজঙ্ঘা, মাকালু, ধাবলগিরি, নাঙ্গা পর্বত ইত্যাদি এই শ্রেণীতে অবস্থিত। হিমাদ্রি হিমালয় সারাবছর বরফে ঢাকা থাকে এবং এখানে অনেক হিমবাহ দেখা যায়।
[গ] হিমাচল হিমালয় (Himachal Himalaya) বা মধ্য হিমালয় (Middle Himalaya)
হিমাদ্রির দক্ষিণে অবস্থিত এই শ্রেণীর গড় উচ্চতা প্রায় 3,500 থেকে 4,500 মিটার। পীরপাঞ্জাল, ধাওলাধর, মুসৌরি, মহাভারত রেঞ্জ ইত্যাদি পর্বতশ্রেণী এখানে অবস্থিত। এই অঞ্চলটি মনোরম উপত্যকা, যেমন কাশ্মীর উপত্যকা, কাংড়া উপত্যকা এবং কুলু উপত্যকার জন্য বিখ্যাত। এটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলির (যেমন সিমলা, মানালি, নৈনিতাল, দার্জিলিং) জন্য পরিচিত।
[ঘ] শিবালিক বা বহিঃ হিমালয় (Shiwalik or Outer Himalaya)
হিমালয়ের সবচেয়ে দক্ষিণের এবং নবীনতম এই অংশের গড় উচ্চতা 900 থেকে 1,200 মিটার। এটি পাহাড়ের পাদদেশ বা ফুটহিল এলাকা নামেও পরিচিত। শিবালিক এবং মধ্য হিমালয়ের মাঝখানে অবস্থিত অনুদৈর্ঘ্য উপত্যকাগুলিকে 'দুন' (যেমন দেরাদুন) বলা হয়। এই অঞ্চলটি ঘন বনভূমিতে আবৃত এবং এখানে জনবসতি বেশি।
দৈর্ঘ্য বা পশ্চিম - পূর্ব বরাবর (বা আঞ্চলিক) হিমালয়ের শ্রেণিবিভাগ
আঞ্চলিক বা দৈর্ঘ্য বরাবর হিমালয়কে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়, যা প্রধানত নদী উপত্যকা দ্বারা বিভক্ত। যেমন -
[ক] পশ্চিম হিমালয় (Western Himalaya)
জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের উত্তরে অবস্থিত সিন্ধু নদ থেকে পূর্বে নেপালের কালী নদী পর্যন্ত বিস্তৃত এই অংশটি তিনটি উপবিভাগে বিভক্ত। সমগ্র জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য, হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখন্ড রাজ্য নিয়ে এই অংশটি গঠিত হয়েছে।
[০১] কাশ্মীর হিমালয় (Kashmir Himalaya)
এটি সিন্ধু নদ ও শতদ্রু নদীর মধ্যবর্তী অংশ। কারাকোরাম, লাদাখ, জাস্কার, পীরপাঞ্জাল এবং ধাওলাধর পর্বতশ্রেণী এখানে অবস্থিত। কাশ্মীর উপত্যকা এর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য গিরিপথগুলি হলো – খারদুংলা, বানিহাল (জওহর টানেল), রোটাং প্রভৃতি। ডাল, উলার ও নিসার এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য হ্রদ।
[০২] হিমাচল হিমালয় (Himachal Himalaya)
হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত শতদ্রু ও যমুনা নদীর মধ্যবর্তী অংশটি হিমাচল হিমালয় নামে পরিচিত। এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য পর্বতশ্রেণিগুলি হলো – নাগটিব্বা, মুসৌরি ও পিরপাঞ্জাল। পিরপাঞ্জালের মধ্য দিয়ে রোটাং গিরিপথ উত্তরে লাহুল ও দক্ষিণের কুলু উপত্যকা দুটিকে যুক্ত করেছে। হিমাচল প্রদেশের কাংড়া ও কুলু উপত্যকা এর অন্তর্ভুক্ত।
[০৩] কুমায়ুন হিমালয় (Kumaun Himalaya)
এই অঞ্চলটি উত্তরাখন্ড রাজ্য জুড়ে অবস্থিত। নৈনিতাল, সাততাল বা ভীমতালের মতো হিমবাহসৃষ্ট হ্রদ এখানে দেখা যায়। এখানকার উল্লেখযোগ্য পর্বত শৃঙ্গগুলি হলো – নন্দাদেবী, কামেট, ত্রিশূল ইত্যাদি। ভারতে উচ্চতম গিরিপথ মানা বা ডুংরিলা [5, 608 মি] এখানে অবস্থিত।    
[খ] মধ্য হিমালয় (Central Himalaya)
কালী নদী থেকে তিস্তা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত এই অংশটি মূলত নেপালে অবস্থিত। পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট এই অঞ্চলেই অবস্থিত। এখানে শিবালিক পর্বতশ্রেণি চুরিয়া মুরিয়া নামে এবং হিমাচল পর্বতশ্রেণি মহাভারত লেখ নামে পরিচিত।  
[গ] পূর্ব হিমালয় (Eastern Himalaya)
তিস্তা নদী থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ পর্যন্ত বিস্তৃত এই অংশটি তুলনামূলকভাবে সংকীর্ণ কিন্তু এর উচ্চতা বেশি এবং বৃষ্টিপাতও অধিক। এই অঞ্চলে ঘন বনাঞ্চল এবং জীববৈচিত্র্য প্রচুর।
এই অংশটিকে আবার তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি হলো – 
[ক] দার্জিলিং – সিকিম হিমালয়
এই অঞ্চলটি দার্জিলিং জেলার পার্বত্য অঞ্চল ও সিকিম রাজ্যের মধ্যে অবস্থিত। দার্জিলিং অংশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ সন্দাকফু [3,630 মি] এবং সিকিম অংশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা [8598 মি]। কাঞ্চনজঙ্ঘা শৃঙ্গ পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বত শৃঙ্গ। এই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে ঘুম শৈলশিরা বিস্তৃত হয়েছে।
[খ] ভূটান হিমালয়
এই অংশটি ভূটান রাষ্ট্রে অবস্থিত। এখানকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ চমলহরি [7,314 মি]
[গ] অরুণাচল হিমালয়
হিমালয়ের এই অঞ্চলটি অসম ও অরুণাচল রাজ্যে বিস্তৃত। নামচাবারওয়া [7,756 মি] এই অংশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। 
এই অঞ্চলে ঘন বনাঞ্চল এবং জীববৈচিত্র্য প্রচুর।
উত্তর-পূর্বের শৈলশ্রেণী
ভারতের উত্তর-পূর্ব অংশে হিমালয় পর্বতমালা একটি দক্ষিণমুখী বাঁক নিয়ে বিভিন্ন পাহাড় ও শৈলশ্রেণীতে বিভক্ত হয়েছে। এই অঞ্চলকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
[ক] পূর্বাচল (Purvachal)
একগুচ্ছ সমান্তরাল শৈলশ্রেণি নিয়ে গঠিত এই অঞ্চলটি ভারত ও মায়ানমারের সীমান্তে অবস্থিত। এখানকার উল্লেখযোগ্য পর্বতশ্রেণীগুলি হলো মিশমি পাহাড় [সর্বোচ্চ শৃঙ্গ – দাফাবুম (4,578 মি)], পাটকই পাহাড়, নাগা পাহাড় [সর্বোচ্চ শৃঙ্গ – সরামতী (3,824 মি)], মণিপুর পাহাড়, উত্তর কাছাড় পাহাড়, মিজো পাহাড় ও ত্রিপুরা পাহাড়।  
[খ] মেঘালয় মালভূমি
এই অংশটি মেঘালয় রাজ্যে অবস্থিত। গারো, খাসি ও জয়ন্তিয়া পাহাড় নিয়ে এই অংশটি গঠিত। এই পাহাড়গুলি উপত্যকাগুলির মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করছে এবং বঙ্গোপসাগর থেকে আসা মৌসুমী বায়ুকে আটকে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়।
গারো পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ নকরেক [1,412 মি]। এর উত্তরে শিলং পাহাড়, উত্তর – পূর্বে মিকির পাহাড়, মধ্যভাগে খাসি – জয়ন্তিয়া পাহাড় অবস্থিত।
 
[০২] ভারতের উত্তরের সমভূমি অঞ্চল
ভারতের উত্তরের সমভূমি অঞ্চল, যা সিন্ধু – গাঙ্গেয় - ব্রহ্মপুত্র সমভূমি নামেও পরিচিত, দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগ। হিমালয় পর্বতমালার দক্ষিণে এবং উপদ্বীপীয় মালভূমির উত্তরে অবস্থিত এই সুবিশাল সমভূমি দেশের কৃষি, অর্থনীতি ও জনজীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অবস্থান ও বিস্তার
ভারতের উত্তরের সমভূমি অঞ্চলটি পশ্চিমে রাজস্থানের মরুভূমি থেকে পূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকা পর্যন্ত প্রায় 2,500 কিলোমিটার দীর্ঘ। এর গড় প্রস্থ প্রায় 240 থেকে 320 কিলোমিটার। এই সমভূমি মূলত রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং আসাম রাজ্য জুড়ে বিস্তৃত। এটি মূলত সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদ এবং তাদের অসংখ্য উপনদী দ্বারা বাহিত পলিমাটি দ্বারা গঠিত। এই অঞ্চলের পলিস্তরের গভীরতা কোথাও কোথাও 1000 মিটার পর্যন্ত দেখা যায়।
ভূপ্রাকৃতিক ও আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে উত্তরের সমভূমি অঞ্চল চারভাগে বিভক্ত - 
নদীর অববাহিকা এবং আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে উত্তরের সমভূমিকে চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। যথা -
[ক] পশ্চিমের সমভূমি অঞ্চল
এই অঞ্চলটি মূলত রাজস্থান রাজ্যে অবস্থিত এবং আরাবল্লী পর্বতমালার পশ্চিমে বিস্তৃত। এটি মরুভূমি প্রকৃতির এবং বৃষ্টিপাত অত্যন্ত কম। এই অঞ্চলটি উত্তর – পূর্ব থেকে দক্ষিণ পশ্চিমে প্রায় 640 কিমি দীর্ঘ। এই অঞ্চলকে কয়েকটি উপবিভাগে ভাগ করা যায়।
[০১] মরুস্থলী
এটি থর মরুভূমির প্রধান অংশ, যেখানে স্থায়ী বালিয়াড়ি এবং বালি গঠিত সমভূমি দেখা যায়। এখানকার মৃত্তিকা মূলত বালুকাময় এবং লবণাক্ত। এই অঞ্চলের সারিবদ্ধ স্থায়ী বালিয়াড়ির মধ্যে অবস্থিত লবণাক্ত হ্রদগুলিকে ধান্দ বলে।
[০২] বাগার
এটি আরাবল্লী পর্বতের পশ্চিম পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে মরুস্থলীর পূর্ব দিকে বিস্তৃত। এটি অপেক্ষাকৃত কম শুষ্ক এবং এখানে বিচ্ছিন্নভাবে কৃষিকাজ করা হয়। এই অংশে কিছু প্লায়া হ্রদ (স্থানীয় নাম সর) দেখা যায়।
[০৩] রোহী
এটি বন্যার সময় প্লাবিত হওয়া উর্বর ভূমি যা মূলত বাগার অঞ্চলের নিচু অংশে দেখা যায়। কৃষিকাজের জন্য এটি বেশ উপযোগী।
[০৪] ক্ষুদ্র মরু অঞ্চল
এটি অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট বালুকাময় অঞ্চল, যেখানে ক্ষুদ্র ক্ষণস্থায়ী নদী বা শুষ্ক উপত্যকা দেখা যায়।
[০৫] হামাদা
এটি মূলত পাথর ও নুড়ি দ্বারা গঠিত মরুভূমি অঞ্চল, যেখানে বালির পরিবর্তে পাথরের প্রাধান্য বেশি।
[খ] সিন্ধু সমভূমি বা পাঞ্জাব সমভূমি
এই সমভূমিটি সিন্ধু এবং এর পাঁচটি প্রধান উপনদী – ঝিলাম, চেনাব, ইরাবতী, শতদ্রু ও বিপাশা – দ্বারা গঠিত। এটি মূলত পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যে বিস্তৃত। এই সমভূমির গড় উচ্চতা 200 – 300 মিটার। এই অঞ্চলের বিশেষ  বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ভূমিরূপগুলি হলো -
[০১] দোয়াব
'দোয়াব' কথার অর্থ 'দুই নদীর মধ্যবর্তী ভূমি'। পাঞ্জাব সমভূমিতে দুটি নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে পলিগঠিত উচ্চভূমিকে দোয়াব বলে। এখানে অসংখ্য উর্বর দোয়াব দেখা যায়, যেমন বিস্ত দোয়াব (বিপাশা ও শতদ্রুর মধ্যে), বারী দোয়াব (বিপাশা ও ইরাবতীর মধ্যে), রেচনা দোয়াব (ইরাবতী ও চেনাবের মধ্যে) ইত্যাদি। এই অঞ্চলগুলি কৃষির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
[০২] ধায়া
এটি নদী উপত্যকার উঁচু পাড়, যা বন্যার জল দ্বারা প্লাবিত হয় না। ধায়া অঞ্চলগুলি তুলনামূলকভাবে কম উর্বর।
[০৩] খোশ
এটি মূলত নদী ক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট নিচুভূমি বা গর্ত, যা বর্ষাকালে জলে ভরে ওঠে।
[গ] গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল
এই সমভূমিটি পশ্চিমে যমুনা নদী থেকে পূর্বে ভারত বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমানা বরাবর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এটি ভারতের বৃহত্তম সমভূমি অঞ্চল। এটিকে তিনটি প্রধান উপ-বিভাগে ভাগ করা যায়।
[০১] উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমি
এটি মূলত উত্তরপ্রদেশের পশ্চিম অংশ জুড়ে বিস্তৃত। যমুনা, গঙ্গা, রামগঙ্গা, গোমতী প্রভৃতি নদী দ্বারা গঠিত এই অঞ্চলটি অত্যন্ত উর্বর এবং ঘনবসতিপূর্ণ। গঙ্গা ও যমুনা নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল গঙ্গা – যমুনা দোয়াব নামে পরিচিত।এই অঞ্চলের প্রাচীন পলিগঠিত সমভূমিকে ভাঙ্গর এবং নবীন পলিগঠিত সমভূমিকে খাদার বলে। এখানকার পর্বতের পাদদেশীয় অঞ্চলটিই হলো ভাঙ্গর এবং তার দক্ষিণের অংশ তরাই নামে পরিচিত।  
[০২] মধ্য গাঙ্গেয় সমভূমি
এটি উত্তরপ্রদেশের পূর্ব অংশ এবং বিহার জুড়ে বিস্তৃত। গঙ্গা, ঘাগরা, গন্ডক, কোশি ইত্যাদি নদী এই অঞ্চলের প্রধান নদী। এখানেও কৃষিকাজ খুব উন্নত। এখানে অনেক জলাভূমি দেখা যায়। এগুলি উত্তর বিহারে চাউর এবং দক্ষিণ বিহারে তাল নামে পরিচিত।  
[০৩] নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমি
এটি মূলত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য জুড়ে বিস্তৃত এবং গঙ্গা ও তার অসংখ্য শাখা-প্রশাখা দ্বারা গঠিত। এটি অত্যন্ত নিচু এবং জলাভূমিপূর্ণ। এই অংশে বিভিন্ন স্থানীয় ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। যেমন -
[০১] তরাই ও ডুয়ার্স
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই অঞ্চলটি আর্দ্র ও জলাভূমি প্রকৃতির। তরাই অঞ্চল মূলত উত্তরপ্রদেশে ও উত্তরাখণ্ডে এবং ডুয়ার্স অঞ্চল পশ্চিমবঙ্গে (বিশেষত উত্তরবঙ্গে) অবস্থিত। এই অঞ্চলগুলি ঘন বনভূমিতে আবৃত এবং জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ।
[০২] বরেন্দ্রভূমি
এটি উত্তরবঙ্গের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে অবস্থিত পুরাতন পলিমাটি দ্বারা গঠিত একটি উঁচু ভূমি। এটি তুলনামূলকভাবে কম উর্বর।
[০৩] রাঢ় সমভূমি
এটি পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম অংশে অবস্থিত পুরাতন পলিমাটি দ্বারা গঠিত ঢেউ খেলানো ভূমি। এই অঞ্চলের মাটি ল্যাটেরাইট প্রকৃতির এবং কিছুটা অনুর্বর।
[০৪] বদ্বীপ অঞ্চল
গঙ্গা নদীর মোহনায় বঙ্গোপসাগরের উপকূলে বিশাল বদ্বীপ অঞ্চল গঠিত হয়েছে। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ। এখানকার সুন্দরী ম্যানগ্রোভ অরণ্য এবং রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার বিখ্যাত।
[ঘ] ব্রহ্মপুত্র সমভূমি
এটি মূলত আসাম রাজ্য জুড়ে বিস্তৃত এবং ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বাহিত পলি দিয়ে গঠিত। এই সমভূমি তুলনামূলকভাবে সংকীর্ণ (গড় প্রস্থ প্রায় 80 কিমি) এবং নিচু। প্রতি বছর ব্রহ্মপুত্র নদের বন্যায় এই অঞ্চল প্লাবিত হয়, যা নতুন পলি সঞ্চয়ে সাহায্য করলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। এই সমভূমি চা বাগানের জন্য বিখ্যাত।
নিম্ন অসমে ব্রহ্মপুত্র হ্রদে সৃষ্ট মাজুলি [352 বর্গ কিমি] ভারতের এবং পৃথিবীর বৃহত্তম নদীগঠিত দ্বীপ।
Previous
Next Post »