মাধ্যমিক প্রস্তুতি 2021, Madhyamik Bengali 2021 মাধ্যমিক বাংলা Madhyamik
Bengali কোনি
প্রশ্নঃ “খিদ্দা এবার আমরা কী খাব” – কার উক্তি ? এই উক্তির আলোকে
বক্তার পরিস্থিতির অসহায়তার কথা বিশ্লেষণ করো। [প্রশ্নমান ১+৪=৫]
উত্তরঃ
হাল আমলের বাংলা কিশোর
সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক তথা বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক মোতি নন্দী প্রণীত
কিশোর উপন্যাস ‘কোনি’ থেকে প্রশ্নোদ্ধৃতাংশটি গৃহীত হয়েছে।
আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলো
উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কোনি।
শ্যামপুকুর বস্তির
বাসিন্দা কোনির পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল মানুষ ছিল তার দাদা কমল। একসময়
সাঁতারু হওয়ার স্বপ্ন দেখা কমল দারিদ্রের কারণে সাঁতার ছেড়ে উপার্জনের তাগিদে
রাজাবাজারের একটি মোটর গ্যারেজে কাজে যোগ দেয়। সেখান থেকে প্রাপ্ত কষ্টার্জিত
দেড়শোটি টাকা ছিল তার সংসার চালাবার পাথেয়। দু-বেলা দুমুঠো ভাত ছাড়া আর বিশেষ
কিছুর সংস্থান তাতে হতো না ঠিকই, কিন্তু কষ্টেসৃষ্টে প্রাণধারণটুকু হয়ে যেত।
পরের দিকে কমল সামান্য
অতিরিক্ত স্বচ্ছলতার উদ্দেশ্যে ভাইকে মাসিক পনেরো টাকার বিনিময়ে একটি চায়ের দোকানের
কাজে ঢুকিয়েছিল। কোনিকেও ষাট টাকায় একটি সুতো কারখানায় ঢোকাবার ইচ্ছে থাকলেও
ক্ষিতীশ কোনিকে বড়ো সাঁতারু করার ইচ্ছে প্রকাশ করে সব দায়িত্ব নেওয়ায় তা আর হয়ে ওঠেনি। বরং নিজের অসম্পূর্ণ
স্বপ্ন কোনির মধ্য দিয়ে সফল হয়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখে কমলের প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছিল।
ক্ষিতীশ কোনিকে
প্রতিদিন খাওয়ার জন্য একটা করে টাকা দিত, তাও সংসারের পেছনে খরচ হয়ে যেত।এহেন টানাটানির সংসারে প্রধান
উপার্জনশীল কমল হঠাৎ যক্ষ্মারোগে ভুগে মারা যায়। কমলের এই অকাল মৃত্যু পরিবারের বাকিদের অবস্থা আরও সঙ্গিন করে
তোলে। তাই তার মৃত্যুশোকের চেয়েও যে প্রশ্নটি প্রাসঙ্গিকভাবে আঘাত করে পরিবারের
বাকি সদস্যদের মধ্যে, সেটিই লেখক কোনির এই উক্তির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন।
![]() |
ছবি সৌজন্যঃ পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পাঠ্যপুস্তক |
প্রশ্নঃ “যন্ত্রণাকে বোঝ, ওটাকে কাজে লাগাতে শেখ, ওটাকে হারিয়ে দে” –
কোন পরিস্থিতিতে বক্তা কোন যন্ত্রণা বুঝতে বাধ্য করেছিলেন ? কেন তিনি উক্তিটি
করেছিলেন ? [প্রশ্নমান ৪+১=৫]
অনুরূপ প্রশ্নঃ
প্রশ্নঃ “কমলদিঘিকে টগবগ করে ফুটিয়ে তোল তোর রাগে” – উক্তিটির তাৎপর্য
বুঝিয়ে দাও। [প্রশ্নমান ৫]
অনুরূপ প্রশ্নঃ
প্রশ্নঃ “মানুষের ক্ষমতার সীমা নেই রে, ওরা পাগলা বলছে বলুক” – বক্তা কে
? তাঁর এহেন উক্তির কারণ কী ? [প্রশ্নমান ১+৪=৫]
উত্তরঃ
হাল আমলের বাংলা কিশোর সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক তথা বিশিষ্ট
ক্রীড়া সাংবাদিক মোতি নন্দী প্রণীত কিশোর উপন্যাস ‘কোনি’ থেকে প্রশ্নোদ্ধৃতাংশটি
গৃহীত হয়েছে।
আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র তথা
প্রথিতযশা সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ। তিনি কোনিকে উদ্দেশ্য করে উক্তিটি
করেছিলেন।
কোনিকে সাঁতার শিখিয়ে চাম্পিয়ান হিসেবে তুলে ধরাটা ক্ষিতীশের কাছে
ছিল দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জ। তার নিষ্ঠা ও পরিশ্রমকে অগ্রাহ্য করে জুপিটার কর্তৃপক্ষ
ক্ষমতার দম্ভে তাঁর পঁয়ত্রিশ বছরের সেবাকে অগ্রাহ্য করে তাঁকে অপসারিত করেছে। সর্বসমক্ষে
তাঁকে ‘পাগল’ অভিধায় ভূষিত করেছে। কাজেই প্রশিক্ষক হিসেবে একদিকে যেমন নিজের
যোগ্যতা প্রমাণের তাগিদ ছিল, তেমনই কোনির ভেতরে লুকিয়া থাকা প্রতিভার বিকাশ ঘটানোও
তাঁর লক্ষ্য ছিল।
ক্ষিতীশ জানতেন কোনিকে এই সাফল্য পেতে হলে পরিশ্রম ও কষ্টের সঙ্গে
সঙ্গে নিজেকে নিংড়ে নিজের সেরাটা বের করে আনতে হবে, যা মোটেই সহজ ছিল না। আসলে কোনিকে যে আর্থ সামাজিক পরিবেশ থেকে তিনি
তুলে এনেছেন, সেখান থেকে কোনির মধ্যে এই ইচ্ছাশক্তিটা জাগ্রত করাটাই কঠিন।
সেই কাজ করতে গিয়ে ক্ষিতীশ একটানা তিন ঘন্টা সাঁতার কাটিয়েছেন।
যখনই সে জল থেকে উঠতে চেয়েছে, তখনই ক্ষিতীশ নির্দয়ের মতো ঢিল ছুঁড়ে মেরেছেন,
বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ভয় দেখিয়েছেন। কোনির সব কষ্ট, সব যন্ত্রণা বুঝতে পেরেও তিনি এ’কাজ
করেছেন শুধুমাত্র কোনিকে বোঝানোর জন্য যে, যন্ত্রণাকে পরাভূত করে ইচ্ছাশক্তিকে জয়ী
করে তুলতে পারলে সাফল্য ধরা দেবে।
ক্ষিতীশের মতে যন্ত্রণা সইতে পারলে সহ্যশক্তি বাড়বে আর কষ্টকে
চ্যালেঞ্জ করে হারানোর নামই হল সাধনা। ক্ষিতীশ কোনির মধ্যে এই বোধটাই ফুটিয়ে তুলতে
চেয়েছেন। কমলদিঘির জলে ঝড় তুলে কোনি সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাবে, এটাই ক্ষিতীশের
স্বপ্ন। প্রতিকূলতা আসবেই, তাকে অগ্রাহ্য করে এগিয়ে যাওয়াই জীবন। তাই ক্ষিতীশ এই
মন্তব্য করেছেন।