উত্তরঃ
কার্পাস বস্ত্র উৎপাদনে ভারত বর্তমানে বিশ্বের মধ্যে প্রথম স্থান
অধিকার করে। মহারাষ্ট্র, গুজরাট ও মধ্যপ্রদেশের পশ্চিমাঞ্চল সহ পশ্চিম ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে
কার্পাস বয়ন শিল্প গড়ে উঠেছে। এই অঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্প গড়ে ওঠার মূল কারণগুলি
হলো –
[০১] কাঁচামাল –
কার্পাস বয়ন শিল্পের প্রধান উপাদান হলো কার্পাস বা তুলো। মহারাষ্ট্র
ও গুজরাটের কৃষ্ণমৃত্তিকা অঞ্চলে প্রচুর তুলো উৎপন্ন হয় বলে কার্পাসবয়ন কলগুলি
সহজে ও কম খরচে কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারে।
[০২] আবহাওয়া –
মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্যের উপকূল অঞ্চলের আর্দ্র আবহাওয়া কার্পাস
বয়ন শিল্পের পক্ষে অনুকূল। এরকম আর্দ্র আবহাওয়ায় সুতো ছিঁড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম
থাকে।
[০৩] শক্তিসম্পদের প্রাচুর্য –
কাপড়ের কলগুলিকে সবসময় চালু রাখার জন্য সুলভ শক্তি সরবরাহ প্রয়োজন।
এই শিল্পের প্রাথমিক পর্যায়ে কার্পাসবয়ন কলগুলি দক্ষিণ আফ্রিকার নাটাল ও
ট্রান্সভান্স প্রদেশ থেকে আমদানিকৃত জ্বালানি কয়লার সাহায্যে চালানো হতো। বর্তমানে
ধুভারান, কোরবা, সাতপুরা, নাগপুর, কয়না,
গান্ধিসাগর, উকাই, ট্রম্বে,
নাসিক প্রভৃতি কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎশক্তি পাওয়া যায়।
[০৪] বন্দরের নৈকট্য –
মুম্বাই, জওহরলাল নেহেরু, কান্ডালা, সুরাত,
সিক্কা, পোরবন্দর, ভাবনগর
প্রভৃতি বন্দর দিয়ে কাঁচা তুলো, বয়ন শিল্পের যন্ত্রপাতি,
যন্ত্রাংশ, রাসায়নিক দ্রব্য ইত্যাদি আমদানি
এবং বিশ্বের বাজারে কার্পাস বস্ত্র রপ্তানি করা সুবিধাজনক।
[০৫] উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা –
এই অঞ্চলটি পশ্চিম ও মধ্য রেলপথ এবং 3, 4, 6, 7, 8 প্রভৃতি সড়কপথের মাধ্যমে ভারতের অন্যান্য অংশের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে ওঠায় কাঁচামাল কার্পাসবয়ন কলগুলিতে নিয়ে আসা এবং উৎপাদিত দ্রব্য সহজেই দেশীয় বাজারে পাঠানো সম্ভব হয়।
[০৬] সুলভ শ্রমিক –
এই অঞ্চলটি জনবহুল এবং নিকটবর্তী কোঙ্কণ, সাতারা, শোলাপুর
প্রভৃতি অঞ্চল কৃষিতে অনগ্রসর হওয়ায় এই অঞ্চলগুলি থেকে প্রচুর সংখ্যক সুলভ শ্রমিক
পাওয়া যায়।
[০৭] বাজার –
ইংরেজ শাসনাধীনে মুম্বাই ছিল প্রাদেশিক রাজধানী শহর। স্বাভাবিকভাবেই
এই শহরকে কেন্দ্র করে ঘন জনবসতি গড়ে ওঠে এবং বিশাল বাজারের সৃষ্টি হয়। এর ফলে
কার্পাস বস্ত্রের বিপুল চাহিদা দেখা দেয় ও অন্যান্য সুবিধাগুলিকে কাজে লাগিয়ে নতুন
নতুন কাপড় কল গড়ে ওঠে।