ফরাজি আন্দোলনে দুদু মিয়াঁর ভূমিকা আলোচনা করো।

 


মাধ্যমিক প্রস্তুতি 2021, Madhyamik Preparation  2021  মাধ্যমিক ইতিহাস Madhyamik History

 

প্রশ্নঃ ফরাজি আন্দোলনে দুদু মিয়াঁর ভূমিকা আলোচনা করো। [প্রশ্নমান ৪]

উত্তরঃ

বাংলায় ফরাজি আন্দোলন (১৮০৪) এর প্রতিষ্ঠাতা শরিয়তউল্লাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মহম্মদ মহসিন এই আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী ও জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। তিনি দুদু মিয়াঁ নামে পরিচিত ছিলেন।

ফরাজি আন্দোলনে দুদু মিয়াঁর ভূমিকাঃ

[ক] নীলকর ও জমিদারদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদঃ

দুদু মিয়াঁ ছিলেন বাংলাদেশের নীলকর ও জমিদারদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কন্ঠ। ফরিদপুরের একটি নীলকুঠির ম্যানেজার ডানলপকে শাস্তি দেবার জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করে তিনি ডানলপের নীলকুঠি ধ্বংস করেন। দুদু মিয়াঁর আন্দোলন জমিদার ও নীলকরদের কাছে ত্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

[খ] প্রচলিত কর কাঠামোর বিরুদ্ধে জনমত গঠনঃ

১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দে দুদু মিয়াঁ তাঁর অনুগামী কৃষকদের জমিদারি খাজনা দিতে নিষেধ করেন। তিনি ঘোষণা করেন আল্লাহ হলেন সব জমির মালিক এবং এই কারণে জমিদারদের খাজনা ধার্য করা ও কর আদায়ের অধিকার নেই।

[গ] সমান্তরাল প্রশাসনিক ব্যবস্থাঃ

দক্ষ সংগঠক দুদু মিয়াঁ তাঁর নিয়ন্ত্রানাধীন এলাকায় ‘ফরাজি খিলাফত’ নামে একটি সমান্তরাল প্রশাসন গড়ে তোলেন। তিনি পূর্ববঙ্গকে ‘হল্কা’ নামে কয়েকটি বিভাগে ভাগ করেন। প্রতিটি বিভাগে একজন করে খলিফা থাকতেন। এই খলিফারাই সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে আন্দোলন সংঘটিত করতেন।

পাশাপাশি ইংরেজদের আদালত বন্ধ করে দুদু মিয়াঁ নিজেদের সমস্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য পঞ্চায়েত ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়েছিলেন। আইন – শৃঙ্খলা ব্যবস্থা রক্ষা করতে ও শত্রুদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য তিনি একটি লাঠিয়াল বাহিনীও গড়ে তুলেছিলেন।

উপসংহারঃ

ধর্মীয় আদর্শভিত্তিক দুদু মিয়াঁর এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ বিরোধী কৃষক আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছিল। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে কারারুদ্ধ করলে এই আন্দোলন স্থিমিত হয়ে পড়ে। দুদু মিয়াঁর মৃত্যুর পর উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাবে ফরাজি আন্দোলন শেষ হয়ে যায়।     

Previous
Next Post »