অদল বদল গল্পের দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলী

মাধ্যমিক প্রস্তুতি 2021, Madhyamik Bengali 2021  মাধ্যমিক বাংলা Madhyamik Bengali অদল বদল 



প্রশ্নঃ ‘অদল বদল’ গল্পে বন্ধুত্ব ও সম্প্রীতির যে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে, তা নিজের ভাষায় লেখো।  
[প্রশ্নমান ৫]
উত্তরঃ
গুজরাতি সাহিত্যজগতের মানবতাবাদী লেখক পান্নালাল প্যাটেল রচিত ও অর্ঘ্যকুসুম দত্তগুপ্ত অনূদিত ‘অদল বদল’ গল্পে একদিকে যেমন দুটি সমবয়সী কিশোর অমৃত ও ইসাবের নিবিড় বন্ধুত্বের প্রকাশ ঘটেছে, অন্যদিকে ভারতাত্মার মূলীভূত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুরটি স্পষ্ট হয়ে উঠে গল্পটি একটি সার্থক ছোটোগল্পে পরিণত হয়েছে।
আলোচ্য গল্পে অমৃত ও ইসাব প্রতিবেশী, অভিন্ন হৃদয় সুহৃদ। অথচ অমৃত জাতিতে হিন্দু, ইসাব মুসলমান।
গল্পে উভয়ের চরিত্রেই বেশ কিছু বৈপরীত্য চোখে পড়লেও পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা ও সহযোগিতার মনোভাব বারবার প্রতিফলিত হয়েছে। ইসাবের মতো নতুন জামা পাওয়ার জন্য অমৃত বাবা – মায়ের কাছে আবদার করেছে, আবার বন্ধুকে বাবার শাস্তির হাত থেকে বাঁচাতে নিজের নতুন কেনা জামাটি পড়িয়ে দিতেও দ্বিধাবোধ করেনি। উল্টোদিকে বন্ধুর অপমানের প্রতিশোধ নিতে নতুন জামার পরোয়া না করে কালিয়ার সঙ্গে কুস্তি লড়তে পিছিয়ে আসেনি ইসাবও। এই পারস্পরিক নিখাদ  ভালোবাসায় ধর্ম কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। এই সম্পর্কে ছিল শুধুই বন্ধুত্বের পেলব স্পর্শ। মানবিক সংবেদনেই তারা ছিল পরস্পরের আপনজন।
কবি অতুলপ্রসাদের কথায় –
“নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান
বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান।”  
বিবিধের মাঝে এই ঐক্যের এই আদর্শ ভারতীয় সংস্কৃতির মূল সুর । ভারতের এই সুমহান ঐতিহ্য লেখক পান্নালাল প্যাটেল তাঁর লেখায় বারবার ফুটিয়ে তুলেছেন। অমৃতের মা তথা বাহালি বৌদি ও ইসাবের বাবা হাসানের আচরণ ও কথোপকথনেও পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির দিকটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অমৃত – ইসাবের জামা অদলবদলের কথা জানতে পেরে ইসাবের বাবা সস্নেহে অমৃতকে বুকে জড়িয়ে ধরেছে। অমৃতকে নিজের সন্তানের স্বীকৃতি দিয়ে হাসান ধর্মীয় বিভাজনের উপরে উঠে মানবিক উদারতার পরিচয় দিয়েছেন।
সুতরাং আলোচ্য গল্পে দেখা যায়, কোনো প্রথাগত, আচারসর্বস্ব ধর্ম কখনই সুমহান মানবতার জায়গা নিতে পারে না। এইভাবে ‘অদল বদল’ গল্প সম্প্রদায়গত বিভেদ নয়, বরং বন্ধুত্বের মতো মানবিক, হার্দিক সম্পর্ক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিশ্বস্ত ছবি তুলে ধরে।    
প্রশ্নঃ “অমৃত সত্যিই তার বাবা মা কে খুব জ্বালিয়েছিল” – অমৃত কীভাবে বাবা – মা কে জ্বালাতন করেছিল ? অবশেষে অমৃতের মা কী করেছিলেন ? [প্রশ্নমান ৩ + ২ = ৫]  
উত্তরঃ
প্রথম অংশঃ
গুজরাতি সাহিত্যজগতের মানবতাবাদী লেখক পান্নালাল প্যাটেল রচিত ও অর্ঘ্যকুসুম দত্তগুপ্ত অনূদিত ‘অদল বদল’ গল্পটি দুটি অভিন্নহৃদয় বন্ধু অমৃত ও ইসাবের নিবিড় বন্ধুত্ব তথা মানবিক সম্পর্ককে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে।   
গুজরাতের এক প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের এই দুই কিশোর বালকের মধ্যে বন্ধুত্বের গাঢ়ত্ব এতটাই বেশি ছিল ছিল যে, তারা পোশাক আশাকের দিক থেকেও অভিন্ন থাকতে চায়। দুজনের বাবাই ছিলেন ক্ষেত মজুর, অভাব অনটনকে সহ্য করেই ছিল তাদের জীবনযাপন।
একদিন, ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে ইসাবের জামা ছিঁড়ে যাওয়ায় তার বাবা তাকে একটা নতুন জামা কিনে দেন। তার দেখাদেখি অমৃতও নতুন জামার জন্য বাবা – মায়ের কাছে বায়না করতে থাকে। ফতোয়া জারি করে সে বলে, নতুন জামা কিনে না দেওয়া পর্যন্ত সে বিদ্যালয়মুখী হবে না। এমনকি নিজের জামার ছোটো একটা ছেঁড়া জায়গা আঙুল ঢুকিয়ে আরও বড় করে ছিঁড়ে দেয়। মা অনেকবার অমৃতকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু হার মানতে বাধ্য হন। অমৃত খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেয়, রাতে বাড়িতে ফিরতে পর্যন্ত নিমরাজি হয়ে ইসাবদের বাড়ির গোয়ালঘরে লুকিয়ে থাকে।
এইভাবে নাছোড় অমৃত তার বাবা মাকে জ্বালাতন করেছিল।
দ্বিতীয় অংশঃ
অমৃতের মা অমৃতকে তার এই জেদের জন্য বেকায়দায় ফেলতে কৌশলে নতুন জামা কেনার বিষয়টি তার বাবাকে জানাতে বলেন। এও বলেন, ইসাবকে জামা কিনে দেবার আগে বাবা তাকে খুব মেরেছিল। নাছোড়বান্দা অমৃত জামা কেনার শর্তে মার খেতেও রাজি হয়ে যায়। অমৃতের মা জানতেন, অমৃত বাবার মুখের ওপর কথা বলবে না। আবার অমৃত জানতো, মা যতক্ষণ না পর্যন্ত জামা কিনে দেবার কথা বলবেন, ততক্ষণ বাবার রাজি হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
অবশেষে অমৃতর জেদের কাছে হার মেনে মা অমৃতের বাবাকে রাজি করিয়ে নতুন জামা কিনিয়ে দিয়েছিলেন।
Previous
Next Post »