উত্তরঃ
সমাজ বাস্তবতার সার্থক রূপকার সুবোধ ঘোষ সৃষ্ট ‘বহুরূপী’ শীর্ষক ছোটোগল্পের অন্যবদ্য সাহিত্য চরিত্র হরিদা টাকাটা পেয়েছিলেন।
সমাজ বাস্তবতার সার্থক রূপকার সুবোধ ঘোষ সৃষ্ট ‘বহুরূপী’ শীর্ষক ছোটোগল্পের অন্যবদ্য সাহিত্য চরিত্র হরিদা টাকাটা পেয়েছিলেন।
হরিদা ছিলেন পেশায় একজন বহুরূপী। তাঁর পেশা ছিল তাঁর জীবনের সত্য। কিন্তু তবুও জীবিকা নির্বাহে কখনো বাউল, কখনো উন্মাদ, কখনো কাপালিক বা কাবুলিয়ালার ছদ্মবেশে তিনি সং সেজে পথে নামতেন। একদিন সন্ধ্যাবেলায় শহরের ব্যস্তমুখর সড়কপথে এক রূপসী বাঈজির আগমন পথচলতি জনমানসে কৌতূহল সৃষ্টি করে। ছদ্মবেশী হরিদার ঘুঙুরের ঝনঝন শব্দে শহরে আগত নবাগতদের বিস্মিত, বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতে বাধ্য করে।
অবশ্য পরিচিত এক দোকানদার তাঁর প্রকৃত পরিচয় উন্মোচিত করে দেয় ঠিকই, কিন্তু ছদ্মবেশের আড়ালে চরিত্রের মধ্যে নিখুঁত ভাবে প্রাণসঞ্চার করতে পেরেছিলেন বলেই মুগ্ধ পথচারীদের কাছ থেকে উপহারস্বরূপ তিনি টাকাটা পেয়েছিলেন।
প্রশ্নঃ “অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না” – হরিদার ভুলটি কী ছিল ? বক্তা কেন এমন মন্তব্য করেছিলেন ? উত্তরঃ
সমাজ বাস্তবতার সার্থক রূপকার সুবোধ ঘোষ রচিত ‘বহুরূপী’ শীর্ষক ছোটোগল্প থেকে প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে।
হিমালয়প্রবাসী একজন ভণ্ড সন্ন্যাসী এলাকার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি জগদীশবাবুর কাছে থেকে একশ’ টাকা ও একটি সোনার বোল লাগানো খড়ম প্রণামী হিসেবে নিয়েছেন শুনে হরিদা একদিন এক বিরাগীর ছদ্মবেশে তাঁর বাড়িতে হাজির হন। বিরাগীর ছদ্মবেশে হরিদার জীবনদর্শন, আচরণ ও পাণ্ডিত্য জগদীশবাবুকে মুগ্ধ করায় তিনি খুশি হয়ে তাঁকে একশ’ এক টাকা প্রণামী দিতে চান। কিন্তু খাঁটি সন্ন্যাসীর মতই হরিদা তা অবহেলায় ফিরিয়ে দিয়ে আসেন। গল্পকথক হরিদার এই আচরণকে ‘ভুল’ বলে উল্লেখ করেছেন।
কথক জানতেন আর পাঁচটা পেশার মতো বহুরূপী সেজে হরিদার তেমন উপার্জন হয় না। তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন, সৎ, নির্লোভ এই ব্যতিক্রমী মানুষটি চরম অভাব-অনটনকে সঙ্গী করে জীবনযাপন করেন। সং সেজে রাস্তায় বেরোলে সহৃদয় পথচারীরা যে এক আনা-দু আনা বখশিস দেন, তা দিয়ে তাঁর দুঃসহ অভাব ঘোচে না। তাই এই অতিরিক্ত অর্থ পেয়েও না নেওয়ার বিলাসিতা, রোজকারের অনটনকে অতিক্রম করে সামান্য স্বাচ্ছন্দ্যের প্রত্যাশা বিলীন হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতকে লেখকের ‘ভুল’ বলে মনে হয়েছে।
প্রশ্নঃ “তাতে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যায়।” – ‘ঢং’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? কীসে ঢং নষ্ট হয়ে যায় ?
উত্তরঃ
সমাজ-বাস্তবতার সার্থক রূপকার সুবোধ ঘোষ সৃষ্ট ‘বহুরূপী’ শীর্ষক ছোটোগল্পের অন্যবদ্য সাহিত্য চরিত্র হরিদা ছিলেন পেশায় একজন বহুরূপী। কিন্তু অর্থোপার্জন তাঁর মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল না, বরং নিজের পেশায় তাঁর শিল্পসত্তার আবেগ ছিল অনেক বেশি। তাই একজন দক্ষ শিল্পীর মতো তিনি অভিনীত চরিত্রের সত্তাতে বিলীন হয়ে যেতেন। জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগীর ছধ্মবেশে হরিদা অভিনয়ের মাধ্যমে যে চরিত্রধর্ম ফুটিয়ে তুলেছিলেন, তাকেই তিনি ‘ঢং’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
জগদীশবাবুর বাড়িতে হরিদা যে বিরাগীর ছদ্মবেশে গিয়েছিলেন, তিনি ছিলেন পার্থিব মোহের প্রতি উদাসীন। তাই হরিদার এমন মনে হয়েছিল সামান্য একশ’ এক টাকার লোভ সংবরণ করতে না পারলে বিরাগীর আচরণের সঙ্গে তাঁর বক্তব্যের কোন সামঞ্জস্য থাকবে না। আর্থিক প্রাপ্তি তাঁর সম্পূর্ণ অভিনয়কে ব্যর্থ করে দেবে, শিল্পের প্রতি তাঁর দরদকে কলুষিত করবে, হরিদা তা বুঝতে পারেন।
আসলে শিল্পই হরিদার জীবনের একমাত্র সত্য। অভিনীত চরিত্রে একীভূত হওয়াই শিল্পীর ধর্ম, যে ধর্ম নীলকন্ঠ হতে শেখায়। তাই তিনি অনায়াসে টাকার থলি ত্যাগ করেন, কিন্ত শিল্পগুণ বিসর্জন দিতে পারেন না।
প্রশ্নঃ “তবে কিছু উপদেশ শুনিয়ে যান” – উক্তিটি কার ? তিনি কী উপদেশ শুনিয়েছিলেন ?
উত্তরঃ
সমাজ বাস্তবতার সার্থক রূপকার সুবোধ ঘোষ সৃষ্ট ‘বহুরূপী’ শীর্ষক ছোটোগল্প থেকে গৃহীত প্রশ্নদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা হলেন এলাকা্র সচ্ছ্ল ব্যক্তি জগদীশবাবু।
হিমালয়প্রবাসী একজন ভণ্ড সন্ন্যাসী জগদীশবাবুর কাছে থেকে একশ’ টাকা ও একটি সোনার বোল লাগানো খড়ম প্রণামী হিসেবে নিয়েছেন শুনে হরিদা একদিন এক বিরাগীর ছদ্মবেশে তাঁর বাড়িতে হাজির হন। বিরাগীর ছদ্মবেশে হরিদার জীবনদর্শন, আচরণ ও পান্ডিত্য জগদীশবাবুকে মুগ্ধ করায় তিনি মন্তব্যটি করেন।
জগদীশবাবুর আবেদনের প্রত্যুত্তরে বিরাগীর ছদ্মবেশে হরিদা সাধক জীবনের সারসত্যকে উদ্ভাসিত করে তোলেন। তিনি জগদীশবাবুকে উপদেশ দিয়ে বলেন, মানুষের জীবনে ‘ধন-জন-যৌবন’ কিছুই চিরন্তন নয়, বরং এগুলো হল সুন্দর একেকটি প্রবঞ্চনা। তাই পার্থিব মোহ ত্যাগ করে ঈশ্বরের সঙ্গে একাত্ম হতে হবে। মায়া-মোহ-মমতা-দেহসুখের মতো জাগতিক সুখের বন্ধন থেকে মুক্তি পেলেই সাধক জীবনে উত্তরণ ঘটে, ঈশ্বরের প্রতি প্রেম ব্যাতীত অন্য কোন চিন্তাই সাধকের মনে স্থানলাভ করে না। বিরাগীবেশী হরিদা বলেন, ঈশ্বরলাভের মধ্য দিয়েই সৃষ্টির সকল ঐশ্বর্য আহরণ করা সম্ভব।
প্রশ্নঃ “আমার বুকের ভেতরেই যে সব তীর্থ” – উক্তিটি কার ? এর মর্মার্থ বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ
সমাজ-বাস্তবতার সার্থক রূপকার সুবোধ ঘোষ সৃষ্ট ‘বহুরূপী’ শীর্ষক ছোটোগল্পের অন্যবদ্য সাহিত্য চরিত্র হরিদা উক্তিটি করেছিলেন।
বিবাগীর ছদ্মবেশে হরিদার জীবনদর্শন, আচরণ ও পান্ডিত্য জগদীশবাবুকে মুগ্ধ করায় তিনি খুশি হয়ে তাঁকে তীর্থভ্রমণ বাবদ একশ’ এক টাকা প্রণামী দিতে চান। কিন্তু খাঁটি সন্ন্যাসীর মতই হরিদা তা অবহেলায় ফিরিয়ে দিয়ে আসেন। হরিদা যে বিবাগীর ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন, তিনি ছিলেন পার্থিব মোহের প্রতি উদাসীন। তাই একশ’ এক টাকা প্রণামীর লোভ সংবরণ করতে না পারলে বিবাগীর আচরণের সঙ্গে তাঁর বক্তব্যের সামঞ্জস্য থাকবে না, হরিদার এমন মনে হয়েছিল। আর্থিক প্রাপ্তি তাঁর সম্পূর্ণ অভিনয়কে ব্যর্থ করে দেবে, শিল্পের প্রতি তাঁর দরদকে কলুষিত করবে, হরিদা তা বুঝতে পারেন। আসলে শিল্পই হরিদার জীবনের একমাত্র সত্য। অভিনীত চরিত্রে একীভূত হওয়াই শিল্পীর ধর্ম, যে ধর্ম নীলকন্ঠ হতে শেখায়। বিবাগী হরিদা সন্ন্যাসীর চরিত্র ধর্মে আচ্ছন্ন হয়েই জগদীশবাবুকে বিনীতভাবে বলেছিলেন, তাঁর হৃদয়ের অন্তঃস্থলই তাঁর তীর্থস্থান, যেখানে একজন প্রকৃত শিল্পীর অধিষ্ঠান।
প্রশ্নঃ ‘শুনেছেন হরিদা, কান্ডটা কী হয়েছে?’ – কাদের এই উক্তি ? কান্ডটা কী হয়েছিল ?
উত্তরঃ
সমাজ বাস্তবতার সার্থক রূপকার সুবোধ ঘোষ সৃষ্ট ‘বহুরূপী’ শীর্ষক ছোটোগল্পে গল্পকথক ও তাঁর বন্ধু অনাদি, ভবতোষরা হরিদাকে উদ্দেশ্য করে উক্তিটি করেছেন।
একদিন হরিদা, গল্পকথক ও তাঁর বন্ধুদের কাছ থেকে জানতে পারেন, এলাকার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি জগদীশবাবুর বাড়িতে সম্প্রতি হিমালয় আগত একজন সন্ন্যাসী আতিথ্যগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বয়স নাকি হাজার বছরের বেশি। সর্বত্যাগী সেই সন্নাস্যী সারাবছরে শুধু একটিমাত্র হরিতকি খান। তিনি এতটাই উঁচুদরের যে, কাউকে তাঁর পদধূলি গ্রহণ করতে দেন না।
একদিন জগদীসবাবু তাঁর কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে পায়ের সামনে ধরলে সন্ন্যাসী পা এগিয়ে দিয়েছিলেন, এবং এইভাবে একমাত্র জগদীশবাবু তাঁর পদধূলি লাভে সক্ষম হয়েছিলেন। এমনকি বিদায়কালে তিনি তিনি জগদীশবাবুর কাছ থেকে প্রণামী বাবদ একশ’ টাকা গ্রহণ করেছিলেন।
পার্থিব জীবনের সুখ – দুঃখ থেকে যিনি মোক্ষলাভ করেন, তিনিই প্রকৃত সন্ন্যাসী। হিমালয়বাসী সন্ন্যাসীর আচরণে একটা কপটতা ছিল, ভন্ডামি ছিল। তাই কথক ও তাঁর বন্ধুরা সন্ন্যাসীর এহেন আচরণকে পরিহাসচ্ছলে ‘কান্ড’ বলে উল্লেখ করেছেন।
প্রশ্ন” ‘গল্প শুনে গম্ভীর হয়ে গেল হরিদা” – কোন গল্প শুনে হরিদা গম্ভীর হয়ে গিয়েছিল ?
উত্তরঃ
সমাজ বাস্তবতার সার্থক রূপকার সুবোধ ঘোষ সৃষ্ট ‘বহুরূপী’ শীর্ষক ছোটোগল্প থেকে প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে।
একদিন হরিদা, গল্পকথক ও তাঁর বন্ধুদের কাছ থেকে জানতে পারেন, এলাকার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি জগদীশবাবুর বাড়িতে সম্প্রতি হিমালয় আগত একজন সন্ন্যাসী আতিথ্যগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বয়স নাকি হাজার বছরের বেশি। সর্বত্যাগী সেই সন্নাস্যী সারাবছরে শুধু একটিমাত্র হরিতকি খান। তিনি এতটাই উঁচুদরের যে, কাউকে তাঁর পদধূলি গ্রহণ করতে দেন না।
একদিন জগদীসবাবু তাঁর কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে পায়ের সামনে ধরলে সন্ন্যাসী পা এগিয়ে দিয়েছিলেন, এবং এইভাবে একমাত্র জগদীশবাবু তাঁর পদধূলি লাভে সক্ষম হয়েছিলেন। এমনকি বিদায়কালে তিনি তিনি জগদীশবাবুর কাছ থেকে প্রণামী বাবদ একশ’ টাকা গ্রহণ করেছিলেন।
এই গল্প শুনে হরিদা গম্ভীর হয়ে গিয়েছিলেন।