ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সড়কপথের গুরুত্ব আলোচনা করো।






উত্তরঃ
কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ণে পরিবহন ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়। ভারতীয় অর্থনীতিতে পরিবহন ব্যবস্থার অঙ্গ হিসেবে সড়কপথের ভূমিকা নিচে আলোচনা করা হলো।
[০১] গ্রামীণ উন্নতিতেঃ ভারত কৃষি প্রধান দেশ। এখানকার 64 % অধিবাসীই কৃষিজীবী। সুতরাং, ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষিকাজ ও গ্রামের উন্নতি একান্ত প্রয়জন।  কৃষিজ ফসল ক্রয়বিক্রয়ের জন্য ব্যাবসার কেন্দ্রস্থলে যেতে হয়। সড়কপথের মাধ্যমেই গ্রামের সঙ্গে ব্যাবসাকেন্দ্রের সংযগ রাখা সম্ভব। এক্ষেত্রে জাতীয়  সড়কগুলির গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। যেমন—2 নং জাতীয় সড়ক পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা ও দিল্লির মধ্যে দিয়ে এবং 6 নং জাতীয় সড়ক মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মধ্যে দিয়ে প্রসারিত হয়েছে বলে এইসব রাজ্যের গ্রামগুলি প্রত্যক্ষ ও পরক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির  বড় বড় ব্যাবসাকেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
[০২] গ্রাম শহরের যগকেন্দ্র হিসেবে রেলপথসমূহ বড় বড় শহর, শিল্পাঞ্চল,  প্রশাসনিক কেন্দ্র ও বন্দরসমূহের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু এখনও ভারতবর্ষের অনেক  গ্রামাঞ্চলেই রেলপথ পৌঁছতে পারেনি। তাই সেইসব গ্রামের সঙ্গে শহর, বাণিজ্যকেন্দ্র ও শিল্পকেন্দ্রের যগাযোগ সম্ভব এই সড়কপথের মাধ্যমে। পশ্চিমবঙ্গে 2 নং, 6  নং, 31 নং, 32 নং, 34 নং ও 35 নং জাতীয় সড়কপথের মাধ্যমে গ্রাম থেকে বিভিন্ন পণ্য কলকাতা বন্দরে আনা হয়।
[০৩] কাঁচামাল সরবরাহে সড়কপথের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গ্রামগুলি থেকে শিল্পকেন্দ্রগুলির কাঁচামাল সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া, খনি থেকে শিল্পের প্রয়জনীয় কাঁচামালও শিল্পকেন্দ্রে আনীত হয় সড়কপথের মাধ্যমে। কলকাতা শিল্পাঞ্চলের কলকারখানায় যে কয়লা প্রয়জন হয় তা 2নং জাতীয় সড়কপথে আসানসল-রানিগঞ্জ থেকে কলকাতায় আসে।  
[০৪] পার্বত্য অঞ্চলের উন্নতিতে দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে, যেখানে রেল পরিবহন সম্ভব নয়, সেখানে সড়কপথই যগাযগের একমাত্র ভরসা।
[০৫] আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যেআমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বন্দরগুলির সঙ্গে পশ্চাদভূমির উন্নত যগাযগ থাকা একান্ত প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সড়কপথগুলির ভূমিকা খুবই গুৰুত্বপূর্ণ।
[০৬] প্রতিরক্ষার প্রয়োজনেঃ পশ্চিম ভারতের মরু সীমান্ত অঞ্চল থেকে উত্তর এবং  উত্তর-পূর্ব দিকের বিশাল সীমান্ত অঞ্চলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অটুট রাখার জন্য সড়কপথের এক বড় ভূমিকা আছে। এই অঞ্চলে প্রহরারত সামরিক বাহিনীর পয়জনীয় রসদ এবং সাজসরঞ্জাম নিয়মিত সরবরাহ করার ক্ষেত্রে সড়কপথগুলি  প্রধান ভূমিকা পালন করে।
[০৭] ত্রাণ-সামগ্রী সরবরাহে প্রায় প্রতি বছরই ভারতের কোনো না কোনো অঞ্চল  খরা, বন্যা, ভূমিকম্প অথবা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। বিভিন্ন রাজ্যের এইসব ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের দুর্গত মানুষদের ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ করা এবং প্রয়জনে উদ্ধার করার কাজে জাতীয় সড়কপথগুলি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
[০৮] দেশের সার্বিক উন্নয়নে ভারতের মত বিকাশশীল দেশের প্রকৃত বিকাশের জন্য প্রতিটি অঞ্চলের উন্নয়ন প্রয়জন। ওড়িশার কালাহাণ্ডি, কোরাপুট অঞ্চল, ঝাড়খণ্ড কিংবা নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম প্রভৃতি রাজ্যের পিছিয়ে থাকা
অঞ্চলগুলিকে দেশের অপরাপর অর্থনৈতিক দিক থেকে উন্নত অঞ্চলগুলির সঙ্গে যুক্ত করতে সড়কপথই প্রধান মাধ্যম।
[০৯] অরণ্য সম্পদ সংগ্রহে ভারতের উত্তরে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য রাজ্যগুলি অরণ্য সম্পদে সমৃদ্ধ। ওইসব অঞ্চল থেকে সংগৃহীত মূল্যবান কাঠ ও অরণ্যজাত বহু উপাদান প্রধানত 31 নং, 84 নং এবং
86 নং জাতীয় সড়কপথেই পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যে সরবরাহ করা হয়। ফলে অরণ্য সম্পদ ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও সড়কপথগুলির প্রয়জনীয়তা অসীম।

Previous
Next Post »