বাংলা কবিতা - অসুখী একজন

 


অসুখী একজন কবিতার সারাংশ 

 পাবলো নেরুদার কবিতা "অসুখী একজন" এক শোকগাথা, যেখানে ব্যক্তিগত সম্পর্ক, অপেক্ষা, যুদ্ধের নির্মমতা এবং ধ্বংসের চিত্র একসূত্রে গাঁথা হয়েছে। কবিতার বুনন এমনভাবে গড়ে উঠেছে যে, এটি একদিকে ব্যক্তিগত পরিত্যাগের গল্প, অন্যদিকে বৃহত্তর সামাজিক ও ঐতিহাসিক বাস্তবতার প্রতিফলন।  
কবিতার শুরুতে কবি এক নারীর কথা বলেন, যাকে তিনি একসময় ছেড়ে চলে গেছেন। সেই নারী অপেক্ষারত ছিল, কিন্তু কবি ফিরে আসেননি। এটি কেবল একজন প্রেমিকের বিচ্ছেদের গল্প নয়, বরং গভীরতর অর্থ বহন করে। এখানে অপেক্ষারত নারী প্রতীকী; তিনি হয়তো এক জনপদ, এক সংস্কৃতি বা এমন কিছু, যা কবি নিজের অজান্তে ফেলে এসেছেন এবং যা একসময় তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল
কবি চলে যান দূরে, আর সেই নারীর কাছে পড়ে থাকে শূন্যতা ও প্রতীক্ষা। কিন্তু সময় কারও জন্য থেমে থাকে না। কবি যখন দূরবর্তী ভূখণ্ডে হারিয়ে যান, তখন পৃথিবী চলতে থাকে তার নিজের নিয়মে। একটি কুকুর পথ ধরে চলে যায়, গির্জার এক নান পেরিয়ে যায়, সময়ের স্রোতে কেটে যায় দিন, সপ্তাহ, বছর। প্রকৃতি ধীরে ধীরে কবির পদচিহ্ন মুছে ফেলে, রাস্তার ধুলোতে জন্ম নেয় ঘাস, এবং সেই নারীর জীবনের ওপর সময় নেমে আসে পরপর পাথরের মতো—অসহ্য, অপ্রতিরোধ্য, অনিবার্য।  
তারপর আসে যুদ্ধ। এই যুদ্ধ শুধু ব্যক্তিগত বিচ্ছেদ বা মনোবেদনার রূপ নয়, এটি এক সামষ্টিক বিপর্যয়, যা জনপদকে গ্রাস করে নেয়। যুদ্ধ এখানে এক ভয়াবহ রক্তগঙ্গার রূপ নেয়, যেখানে শিশু ও বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যায়, মন্দির ভেঙে পড়ে, দেবতারা নীরব হয়ে যায়। যুদ্ধের আগুন শুধু মানুষের দেহকে পুড়িয়ে দেয় না, বরং তার বিশ্বাস, সংস্কৃতি, সভ্যতার শেকড়ও উপড়ে ফেলে। যুদ্ধের প্রতিচ্ছবি এতটাই নির্মম যে, যেখানে একসময় জীবনের স্বপ্ন ছিল, সেখানেই পরে থাকে ধ্বংসস্তূপ, রক্তের কালো দাগ।  
এই সর্বগ্রাসী ধ্বংসের মধ্যেও সেই নারী বেঁচে থাকে—এক প্রতীক্ষার প্রতিমা হয়ে। তার অস্তিত্ব যেন এক ব্যর্থ আশার প্রতিচিত্র, যে এখনো কাউকে খুঁজে ফেরে, যে এখনো মনে করে, হয়তো কেউ ফিরে আসবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, যে শহর ছিল, তা এখন ধ্বংসস্তূপ; যে সম্পর্ক ছিল, তা সময়ের গহ্বরে হারিয়ে গেছে।এই কবিতা কেবল প্রেমের বিচ্ছেদ বা অপেক্ষার নয়, এটি সময়, যুদ্ধ, এবং মানব অস্তিত্বের ক্ষণস্থায়ী প্রকৃতির এক মর্মস্পর্শী দলিল। এখানে ব্যক্তিগত স্মৃতি ও ইতিহাসের নির্মমতা একসূত্রে জড়িয়ে গেছে। কবি বোঝাতে চান, সম্পর্কের মতোই সময়ও হারিয়ে যায়, ধ্বংস হয়ে যায় সভ্যতা, কিন্তু কোথাও কেউ হয়তো এখনো অপেক্ষা করে, অতীতের ছায়া ধরে রাখার এক দুরাশায়।

Previous
Next Post »