উত্তরঃ
শঙ্খ ঘােষের 'জলই পাষাণ হয়ে আছে’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত ‘আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতাটি নামকরণের বিচারে যথেষ্ট ব্যঞ্জনাধর্মী ও শিল্পোজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। গভীর সঙ্কটের পরিবেশে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকার আহ্বানই হলো কবিতাটির মূলভাব। নামকরণে সেই মূল ভাবটি দারুণভাবে আভাসিত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই, কবিতাটির নামকরণ হয়েছে খুবই সার্থক ও তাৎপর্যপূর্ণ।
শােষণ, পীড়ন, বঞ্চনা ইত্যাদিতে সাধারণ মানুষের জীবন অসহায় হয়ে পড়েছে। চলার পথে শুধুই মানুষের জীবন অসহায় হয়ে পড়েছে। চলার পথে শুধুই প্রতিকুলতা বিরাজ করছে। তাই, ডানপাশে ধ্বস, বাঁ পাশে গিরিখাত, মাথার ওপর বােমারু বিমান ও পায়ে পায়ে হিমানির বাঁধ দেখা গিয়েছিল। তাদের ঘর উড়ে গেছে । বহু শিশুমৃত্যু ঘটেছে। শিশু শব কাছে-দূরে ছড়িয়ে থেকেছে। বড়ােরাও জীবনহানির আশঙ্কা করেছে। তাদের বঞ্চিত জীবনে উজ্জ্বল ইতিহাস বলে কিছু নেই। চোখ-মুখ ঢাকা, ব্যক্তিত্বহীন, ভিখারি জীবন হল তাদের বৈশিষ্ট্য। পৃথিবীর ভালাে থাকা বা খারাপ থাকার ওপর তাদের কিছুই এসে যায় না। এ অবস্থায় কবির মনে হয়েছে, যারা শুভ বুদ্ধিসম্পন্না কয়েক জন আছে, তারা যেন ঐক্যবদ্ধ হয়। হাতে হাত রেখে ঐক্যবদ্ধ হলেই তাদের সর্বাত্মক সংকট মুক্তি ঘটবে।
এইভাবে, সমগ্র কবিতাটির একদিকে আছে বঞ্চিত, নিপীড়িত, শােষিত, অসহায় মানুষের সংকট, অন্যদিকে আছে সেই সঙ্কট মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান। শুভ চেতনায় আস্থাশীল কৰি সেই সংকটমুক্তির ওপরেই বেশি গুরুত্ব দিতে চেয়েছেন। তিনি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানের ওপর জোর দিয়েছেন। সেই কারণে, কবিতাটির নামকরণও হয়েছে খুবই ব্যঞ্জনাধর্মী ও সার্থক।
প্রশ্নঃ “আয় আরাে হাতে হাত রেখে আয় আৱাে বেঁধে বেঁধে থাকি।”—সমগ্র কবিতার আলােকে বক্তব্যটি তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে।
উত্তরঃ
শঙ্খ ঘােষের ‘জলই পাষাণ হয়ে আছে’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত ‘আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি’ নামক কবিতার এক অতি তাৎপর্যপূর্ণ অংশ হল প্রশ্নের উদ্ধৃতিটি। অংশটিতে সমগ্র কবিতার মূল ভাবনাটি আভাসিত হয়েছে।
সেই ভাবনাটি হল ভয়ঙ্কর প্রতির পরিবেশে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকলেই জীবনের সাফল্য আসবে। কবিতাটির বক্তব্য বিশ্লেষণ করে বিষয়টিকে দেখানাে যেতে পারে।
জীবনপথের চারদিকে দেখা দিয়েছে চরম প্রতিকূলতা। ডানপাশে ধ্বস, বাঁ পাশে গিরিখাত, মাথার ওপর বােমারু এবং পায়ে পায়ে হিমানির বাঁধের উল্লেখে তারই প্রমাণ পাওয়া যায়। জীবনের স্বাভাবিক চলার পথ আজ আর নেই।
মানুষের ঘর উড়ে গেছে তথা মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। শিশুদের শব কাছে-দূরে ছড়ানাে রয়েছে। এই পরিবেশে বড়রাও নিজেদের অস্তিত্বের আশঙ্কা করে বলেছে—“এ মুহূর্তে মরে যাব না কি?” অসহায়, বঞ্চিত, নিপীড়িত, শােষিত মানুষের উল্লেখযােগ্য কোনাে ইতিহাস নেই। আর থাকলে তা চোখ-মুখ ঢাকা মানুষ অথবা চিরকালের ভিখারি মানুষের ইতিহাস। পৃথিবী বেঁচে থাকলে অথবা মরে গেলে তার প্রভাব এদের ওপর পড়েই না। এরা স্মরণাতীত কাল থেকেই কেবল শােষিত হয়ে আসছে। জীবন্ত এইসব অসহায় মানুষের পরিবেশে কয়েকজন হলেও শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ তাে বেঁচে আছে। তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ প্রতিরােধের মঞ্চ তৈরি করে এগােলেই মূল সমস্যার সমাধান হবে বলে কবির বিশ্বাস। তাই কবি বলেছেন—“আয় আরাে হাতে হাত রেখে আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি।”
এইভাবে কবিতার প্রথমদিকে শােষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত, অসহায় মানুষের জীবন যন্ত্রণার কথা উঠে এসেছে।
আর, তারই মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করার ব্যঞ্জনাটিও উকি দিয়েছে। কবিতার শেষাংশে সেই ভাবনাটিই পূর্ণতর
রূপ নিয়ে জীবন সাফল্যের পথ দেখিয়েছে। সুতরাং, সংশ্লিষ্ট উদ্ধৃতিটির মূল বক্তব্যকে ভাষান্তরে বলা যায়—“United we stand, Divided we fall."