অ্যামোনিয়া গ্যাস
পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়া
গ্যাস প্রস্তুতিঃ
A. প্রয়োজনীয় রাসায়নিক
দ্রব্যঃ
[ক]
অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড (NH4Cl)
[খ]
ক্যালসিয়াম অক্সাইড বা পোড়া চুন (CaO) অথবা ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইড বা কলিচুন [Ca(OH)2]
B. বিক্রিয়ার শর্তঃ
পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড [NH4Cl]
ও ক্যালসিয়াম অক্সাইড [CaO] বা পোড়া চুন অথবা
ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড বা কলিচুনের [Ca(OH)2] মিশ্রণকে উত্তপ্ত করে অ্যামোনিয়া
গ্যাস [NH3] প্রস্তুত
করা হয়। এই বিক্রিয়ায় অ্যামোনিয়া গ্যাস সহ ক্যালসিয়াম
ক্লোরাইড [CaCl2] ও জলীয় বাষ্প [H2O] উৎপন্ন হয়।
C. রাসায়নিক সমীকরণঃ
2NH4Cl + CaO → CaCl2 + 2 NH3+ H2O
অথবা,
2NH4Cl
+ Ca (OH)2 → CaCl2
+ 2 NH3+ H2O
D. শুষ্ককরণ
উৎপন্ন অ্যামোনিয়া গ্যাসের সঙ্গে জলীয় বাষ্প
মিশে থাকে। কিন্তু অ্যামোনিয়া মৃদু ক্ষারধর্মী হওয়ায় অম্লধর্মী নিরূদক H2SO4,
অনার্দ্র CaCl2 বা P2O5 দ্বারা অ্যামোনিয়া গ্যাসকে
শুষ্ক করা যায় না। কারণ -
[ক] ক্ষারধর্মী অ্যামোনিয়া, সালফিউরিক আসিড [H2SO4]
এর সঙ্গে বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়াম সালফেট লবণ [(NH4)2SO4] উৎপন্ন
করে।
NH3 + H2SO4 → (NH4)2SO4
[খ] ক্ষারধর্মী অ্যামোনিয়া, ফসফরাস পেন্টক্সাইড [P2O5]
এর সঙ্গে বিক্রিয়ায় অ্যামোনিয়াম ফসফেট লবণ উৎপন্ন করে।
NH3 + P2O5 + 3H2O
→ 2(NH4)3PO4
[গ] ক্ষারধর্মী অ্যামোনিয়া, অনার্দ্র ক্যালসিয়াম ক্লোরাইডের
সঙ্গে বিক্রিয়া করে যুত যৌগ গঠন করে।
8NH3 + CaCl2 → CaCl2.8NH3
অ্যামোনিয়া গ্যাস শুষ্ক করতে নিরূদকরূপে পোড়াচুন (CaO) ব্যবহার
করা হয়। পোড়াচুন এবং অ্যামোনিয়া উভয়েই ক্ষারধর্মী হওয়ায় এরা পরস্পরের সঙ্গে বিক্রিয়া
করে না।
সংগ্রহঃ
অ্যামোনিয়া গ্যাস জলে অত্যন্ত দ্রাব্য এবং জলে দ্রবীভূত হয়ে
অ্যামোনিয়াম হাইড্রক্সাইড (NH4OH) উৎপন্ন করে। তাই অ্যামোনিয়াকে জলের অপসারণ
দ্বারা সংগ্রহ করা যায় না।
NH3 + H2O → NH4OH
আমোনিয়ার ক্ষারীয়
ধর্মঃ
অ্যামোনিয়া গ্যাস একটি মৃদু ক্ষার। তাই এটি
অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়াম লবণ উৎপন্ন করে। যেমন – গ্যাসীয় হাইড্রোজেন
ক্লোরাইড – এর সঙ্গে অ্যামোনিয়া গ্যাসের বিক্রিয়ায় অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডের সাদা ধোঁয়া
উৎপন্ন হয়। এই বিক্রিয়া দ্বারা অ্যামোনিয়া গ্যাসকে শনাক্ত করা যায়।
NH3 + HCl → NH4Cl
অ্যামোনিয়ার জারণ
ধর্মঃ
বিশুদ্ধ ও শুষ্ক অ্যামোনিয়াকে 900o
C তাপমাত্রায় উত্তপ্ত প্ল্যাটিনাম – রেডিয়াম সংকর (90% Pt, 10% Rh) অনুঘটকের উপস্থিতিতে
বায়ুর অক্সিজেন দ্বারা জারিত করে নাইট্রিক অ্যাসিডের অ্যানহাইড্রাইড বা নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড (NO2)
গ্যাসে পরিণত করা হয়।
4NH3
+ 5O2 → 4NO + 6H2O
4NO
+ 2O2 → 4NO2
উৎপন্ন NO2 গ্যাস অতিরিক্ত অক্সিজেন
ও জলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে নাইট্রিক অ্যাসিড
উৎপন্ন করে। এই প্রক্রিয়ায় নিম্নরূপ বিক্রিয়া ঘটে –
4NO2 + O2 + H2O → 4HNO3
আমোনিয়ার বিজারণ
ধর্মঃ
বিশেষ বিশেষ অবস্থায় অ্যামোনিয়া মৃদু বিজারণ
ধর্ম দেখায়। উত্তপ্ত অবস্থায় কম তড়িৎ ধনাত্মক
ধাতুর অক্সাইড অ্যামোনিয়া দ্বারা জারিত হয়ে নাইট্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে। এই বিক্রিয়া
থেকে বোঝা যায়, অ্যামোনিয়াতে নাইট্রোজেন আছে। যেমন -
[ক] লোহিত তপ্ত ও কালো রঙের কিউপ্রিক অক্সাইডের [CuO] ওপর দিয়ে
অ্যামোনিয়া গ্যাস [NH3] চালনা করলে এটি কিউপ্রিক অক্সাইডকে বিজারিত করে
লাল রঙের ধাতব কপারে [Cu] পরিণত হয় এবং নিজে নাইট্রোজেনে [N2] জারিত হয়।
3CuO + 2NH3 → 3Cu + N2 + 3H2O
[খ] উত্তপ্ত ও হলুদ বর্ণের লেড মনোক্সাইডের [PbO] ওপর দিয়ে
অ্যামোনিয়া গ্যাস [NH3] চালনা করলে এটি লেড মনোক্সাইডকে বিজারিত করে রূপালী
সাদা বর্ণের লেড ধাতুতে [Pb] পরিণত হয় এবং নিজে নাইট্রোজেনে [N2] জারিত
হয়।
3PbO + 2NH3 → 3Pb + N2 + 3H2O
ধাতব লবণের সঙ্গে
বিক্রিয়াঃ
অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ অর্থাৎ অ্যামোনিয়াম হাইড্রক্সাইড বিভিন্ন
ধাতব লবনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে ধাতব হাইড্রক্সাইডের বিশেষ বিশেষ অধঃক্ষেপ সৃষ্টি করে।
যেমন –
[ক] ফেরিক ক্লোরাইড [FeCl3] দ্রবণে অ্যামোনিয়াম
হাইড্রক্সাইড [NH4OH] যোগ করলে বাদামী বর্ণের ফেরিক হাইড্রক্সাইড
[Fe(OH)3] অধঃক্ষিপ্ত হয়।
FeCl3 + 3NH4OH → Fe(OH)3 + 3NH4Cl
[খ] অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড [AlCl3] দ্রবণে অ্যামোনিয়াম
হাইড্রক্সাইড [NH4OH] যোগ করলে অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রক্সাইড [Fe(OH)3]
- এর সাদা ও আঠালো অধঃক্ষেপ উৎপন্ন হয়।
AlCl3 + 3NH4OH → Al(OH)3 + 3NH4Cl
জটিল যৌগ গঠনঃ
কোনো কোনো ধাতব লবণের জলীয় দ্রবণে অ্যামোনিয়াম হাইড্রক্সাইড
অতিরিক্ত পরিমাণে যোগ করলে জটিল লবণ উৎপন্ন হয়।
হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস
1777 খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞানী শিলে হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস
আবিষ্কার করেন। এই গ্যাসটিকে সালফিউরেটেড হাইড্রোজেনও
বলে।
পরীক্ষাগার প্রস্তুতিঃ
প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্যঃ
[ক] ফেরাস সালফাইড [FeS]
[খ] লঘু সালফিউরিক অ্যাসিড [H2SO4]
নীতিঃ
পরীক্ষাগারে
সাধারণ উষ্ণতায় ফেরাস সালফাইড – এর সঙ্গে
লঘু সালফিউরিক অ্যাসিডের বিক্রিয়ায় হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়।
বিক্রিয়ার সমীকরণঃ
FeS
+ H2SO4 → H2S + FeSO4
সংগ্রহঃ
H2S গ্যাস জলে দ্রাব্য।
তাই, জলের অপসারণ দ্বারা এই গ্যাস সংগ্রহ করা যায় না। কিন্তু বায়ু অপেক্ষা ভারী বলে
একে বায়ুর ঊর্ধ্ব অপসারণ দ্বারা গ্যাসজারে সংগ্রহ করা হয়।
শুষ্ককরণঃ
এই গ্যাসকে শুষ্ক করতে হলে প্রথমে P2O5
পূর্ণ U আকৃতির নলে পাঠাতে হবে। P2O5 গ্যাসের মধ্যে মিশে থাকা
জলীয় বাষ্পকে শোষণ করে নেয়। তারপর U আকৃতির নল থেকে নির্গত শুষ্ক গ্যাসকে সংগ্রহ করা
হয়।
[ক]
H2S গ্যাসকে গাঢ় H2SO4 দ্বারা শুষ্ক করা যায় না।
কারণ, গাঢ় H2SO4 তীব্র জারক পদার্থ, তাই H2S গ্যাসকে
সালফারে [S] জারিত করে দেয়।
H2S
+ H2SO4 → 2H2O + SO2
+ S
[খ]
H2S গ্যাসকে ক্যালসিয়াম অক্সাইড বা পোড়াচুন [CaO] দ্বারা শুষ্ক করা যায়
না। কারণ, গাঢ় CaO ক্ষারকীয় পদার্থ, তাই অম্লধর্মী H2S – এর সঙ্গে বিক্রিয়া
করে লবণ ও জল উৎপন্ন করে।
H2S
+ CaO → CaS + H2O
[গ]
H2S গ্যাসকে অনার্দ্র ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড [CaCl2] দ্বারা শুষ্ক
করা যায় না, কারণ H2S গ্যাস অনার্দ্র CaCl2 – র সঙ্গে বিক্রিয়ায়
ক্যালসিয়াম সালফাইড [CaS] লবণ উৎপন্ন করে।
H2S
+ CaCl2 → CaS + 2HCl
H2S গ্যাস প্রস্তুতিতে
সতর্কতা
H2S একটি বিষাক্ত গ্যাস। দীর্ঘক্ষণ এই গ্যাসের সংস্পর্শে
থাকলে শরীর অসুস্থ হয়ে যায়, এমনকি প্রাণহানির সম্ভাবনা থাকে। তাই এই পরীক্ষাগারে এই
গ্যাস প্রস্তুতির সময় উলফ বোতলটিকে সম্পূর্ণ বায়ুনিরুদ্ধ করতে হয়। গ্যাস উৎপাদন শেষ
হয়ে গেলে নির্গম নলের মুখটি ঠান্ডা জলে ডুবিয়ে রাখতে হবে, তাহলে গ্যাসটি ঠান্ডা জলে
দ্রবীভূত হয়ে যাবে।