অভিব্যক্তি



প্রশ্নঃ অভিব্যক্তি বলতে কী বােঝো?
অভিব্যক্তি (Evolution) 
যে মন্থর এবং গতিশীল প্রক্রিয়ায় বংশানুক্রমে উদবংশীয় সরলতম জীব থেকে নানারকমের পরিবর্তন ও ক্রমিক রূপান্তরের মাধ্যমে নতুন এবং অপেক্ষাকৃত জটিলতর জীবের উৎপত্তি ঘটে, তাকে বিবর্তন বা অভিব্যক্তি বলে।
অভিব্যক্তি দু প্রকারঃ 
[ক] রাসায়নিক অভিব্যক্তি (Chemical Evolution) : 
যে পদ্ধতিতে অজৈব রাসায়নিক পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত জৈব যৌগের পরিবর্তনে জীবদেহের ক্রমবিকাশ ঘটে তাকে রাসায়নিক অভিব্যক্তি বা রাসায়নিক বিবর্তন বলে। জীব সৃষ্টির প্রাক মুহূর্তে রাসায়নিক অভিব্যক্তির ফলেই প্রথম জীবকোশ গঠিত হয়। অর্থাৎ রাসায়নিক অভিব্যক্তি জৈব অভিব্যক্তিকে সাহায্য করে।
[খ] জৈব অভিব্যক্তি (Organic Evolution) : 
যে প্রাকৃতিক নিরবিচ্ছিন্ন মন্থর অথচ গতিশীল পদ্ধতিতে ধারাবাহিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সরল উদংশীয় জীব থেকে জটিলতর উন্নত জীবের সৃষ্টি হয় বা জীবের দেহাংশের পরিবর্তন ঘটে তাকে জৈব অভিব্যক্তি বলে।

প্রশ্নঃ জৈব অভিব্যক্তির অঙ্গসংস্থানগত প্রমাণ হিসেবে বিভিন্ন মেরুদণ্ডী প্রাণীর হৃদপিণ্ডের মৌলিক গঠন আলোচনা করো।
উত্তরঃ 
বিভিন্ন মেরুদণ্ডী প্রাণীর হৃৎপিণ্ডের গঠন
প্রাণীজগতে মৎস্য, উভচর, সরীসৃপ, পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর হৃৎপিণ্ডের গঠন পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে যে, হৃৎপিণ্ডের গঠনে সামান্য পার্থক্য থাকলেও মৌলিক গঠন একইপ্রকার। যথাঃ
[1] মৎস্য শ্রেণির প্রাণীদের হৃৎপিণ্ড একটি অলিন্দ ও একটি নিলয় নিয়ে গঠিত এবং সরল প্রকৃতির। এখানে কেবল দূষিত রক্তের সংবহন ঘটে, তাই একে ভেনাস হৃৎপিণ্ড বলে।
[2] উভচর শ্রেণির প্রাণীদের (ব্যাঙ) হৃৎপিণ্ড দুটি অলিন্দ ও একটি নিলয় নিয়ে গঠিত। এখানেও বিশুদ্ধ ও দূষিত রক্তের মিশ্রণ ঘটে এবং দেহে মিশ্রিত রক্ত পরিবাহিত হয়।
[3] সরীসৃপ শ্রেণির প্রাণীদের (সাপ, টিকটিকি; ব্যতিক্রম কুমির) হৃৎপিণ্ড দুটি অলিন্দ ও একটি অর্ধবিভক্ত নিলয়  নিয়ে গঠিত, যা তুলনামূলকভাবে উন্নত ও জটিল। এই প্রকার হৃৎপিণ্ড পর্যবেক্ষণ করলে পরিষ্কার বোঝা যায় যে দূষিত, বিশুদ্ধ রক্তকে পৃথক রাখার বিবর্তন শুরু হয়েছে।
[4] পক্ষী ও স্তন্যপায়ী শ্রেণিভুক্ত সমস্ত প্রাণীর হৃৎপিণ্ড দুটি অলিন্দ ও দুটি পূর্ণবিভক্ত নিলয় নিয়ে গঠিত এবং এখান
দূষিত ও বিশুদ্ধ রক্তের মিশ্রণ কখনোই ঘটে না।
সুতরাং, ওপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, মাছ, ব্যাঙ, সাপ, মানুষ অর্থাৎ মৎস্য, উভচর, সরীসৃপ, পক্ষী স্তন্যপায়ী প্রভৃতি মেরুদণ্ডী প্রাণীগোষ্ঠী একই পূর্বপুরুষ বা উদ্বংশীয় জীব থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে এবং বিবর্তনের পর্যায়ক্রমিক ধারা অনুযায়ী এদের অঙ্গগুলিও সরল থেকে ক্রমশ জটিল ও উন্নত বৈশিষ্ট্যযুক্ত হয়েছে।

Previous
Next Post »