অভিযোজন



প্রশ্নঃ অভিযোজন কাকে বলে ? অভিযোজনের উদ্দেশ্যগুলি লেখো। ME [12, 11, 09, 06, 04, 02, 96, 95]

উত্তরঃ 

অভিযোজন (Adaptation) : 

কোনাে নির্দিষ্ট পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকা, অস্তিত্ব রক্ষা এবং বংশবিস্তারের জন্য পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জীবের গঠনগত, শারীরবৃত্তীয়
ক্রিয়াকলাপ ও আচরণের (বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ) স্থায়ী পরিবর্তনকে অভিযােজন বা অ্যাডাপটেশন বলে।
অভিযোজনের উদ্দেশ্য বা তাৎপর্যঃ 
[০১] পরিবর্তনশীল পরিবেশে জীবের অস্তিত্ব রক্ষাঃ পরিবর্তনশীল পরিবেশ ও প্রতিকূলতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য জীবের গঠনগত শারীরবৃত্তীয় ও আচরণগত পরিবর্তন ঘটে। এর দ্বারা জীব পরিবেশের
প্রতিকূলতা কাটিয়ে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকে ও বংশবৃদ্ধি করে।
[০২] আত্মরক্ষাঃ 
বর্ণগ্রহ, অনুকৃতি ধরনের অভিযােজন জীবকে আত্মরক্ষায় সাহায্য করে।
[০৩] অনুকূল প্রকরণ সৃষ্টিঃ 
অভিযােজনের মাধ্যমে জীবদেহে অনুকুল প্রকরণ সৃষ্টি হয় যা, জীবের জীবনসংগ্রাম ও অস্তিত্ব রক্ষায় সাহায্য করে।
[০৩] নতুন প্রজাতি সৃষ্টি ও জীববৈচিত্র্যঃ 
অনুকূল প্রকরণযুক্ত জীব পরিবেশে সফলভাবে অভিযােজিত হয় এবং প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয়। নতুন প্রজাতি সৃষ্টির মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধি পায়।
[০৪] অভিব্যক্তিঃ
অভিযােজনের দ্বারা জীবের অভিব্যক্তির পথ সুগম হয়।

প্রশ্নঃ অঙ্গসংস্থানগত অভিযােজন বলতে কী বােঝো?
উদাহরণের সাহায্যে বুঝিয়ে দাও।

অঙ্গসংস্থানগত অভিযোজন (Morphological
Adaptation) :
প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য জীবদেহে যে গঠনগত স্থায়ী পরিবর্তন দেখা যায়, তাকে
অঙ্গসংস্থানগত অভিযােজন বলে। উদাহরণ -
[০১] ক্যাকটাস উদ্ভিদের অঙ্গসংস্থানগত অভিযােজনঃ
[ME 14, 09, 00, 95]
উত্তর। ক্যাকটাস উদ্ভিদের অঙ্গসংস্থানগত অভিযােজনঃ
শুষ্ক মরু পরিবেশে ক্যাকটাস উদ্ভিদ (Opuntia sp.)পাওয়া যায়। এর অঙ্গসংস্থানিক অভিযােজনগুলি হলো -
মূলঃ
(i) ক্যাকটাসের মূলতন্ত্র সুগঠিত এবং বহু শাখাপ্রশাখাযুক্ত হয়।
(ii) মাটির গভীর থেকে জল সংগ্রহের জন্য প্রধান মূল মাটির অনেক গভীরে প্রবেশ করে এবং শাখাপ্রশাখা মূলগুলি জালের মতাে মাটির নীচে প্রসারিত হয় ।
কাণ্ডঃ
(i) কাণ্ড রসালো, ক্লোরোফিলযুক্ত ও চ্যাপটা ; এদের পর্ণকান্ড বলে।
(ii) বাষ্পমোচনের হার হ্রাস করার জন্য কান্ডের ত্বক পুরু ও কিউটিকলযুক্ত।
(iii) কাণ্ডের কোশে মিউসিলেজ থাকায় কোশের জলধারণের ক্ষমতা বেশি।
পাতাঃ
(i) বাষ্পমোচন রোধ করার জন্য ক্যাকটাসের পাতাগুলি কাঁটায় রূপান্তরিত হয়, যা আত্মরক্ষায় সাহায্য করে।
(ii) পাতাগুলি মোমজাতীয় পদার্থ দ্বারা আবৃত থাকায় বাষ্পমোচন হ্রাস পায়। পাতায় পত্ররন্ধ্রের সংখ্যাও খুব কম হয়।
ফুল ও বীজঃ
ফুল রঙিন, পতঙ্গপরাগী এবং বীজ শক্ত আবরণ দ্বারা আবৃত থাকে।

[০২] রুই মাছের অঙ্গসংস্থানিক অভিযোজনঃ
[ক] দেহাকৃতি
জলের ঘর্ষণজনিত বাধাকে প্রতিরোধ করে এগিয়ে চলার জন্য দেহ মাকু আকৃতির হয়।
[খ] দেহাবরণ
রুই মাছের দেহ আঁশ দিয়ে ঢাকা থাকে। আঁশ মাছকে সাঁতারের সময় জলের ঘর্ষণজনিত বাধা দূর করতে এবং আত্মরক্ষা করতে সাহায্য করে।
[গ] পাখনা
রুই মাছের দেহে মােট সাতটি পাখনা থাকে
যার মধ্যে পৃষ্ঠপাখনা মাছকে দেহের ভারসাম্য বজায় রেখে সামনের দিকে এগােতে সাহায্য করে। পুচ্ছপাখনার সাহায্যে মাছ সহজেই দিক পরিবর্তন করতে পারে। বক্ষ এবং শ্রোণিপাখনা মাছকে বিভিন্ন তলে ওঠানামা করতে বা একই তলে স্থিরভাবে ভেসে থাকতে সাহায্য করে। পাখনাগুলি মাছকে জলের চাপ সহ্য করতে সাহায্য করে।
[ঘ] পটকা
এটি মাছের উদরগহ্বরে থাকে। এর মধ্যে বায়ুর পরিমাণ বাড়িয়ে বা কমিয়ে মাছ জলে ভেসে বা ডুবে থাকতে পারে।
[ঙ] ফুলকা
ফুলকা মাছকে জলের ভিতরে শ্বাসকার্য চালাতে সাহায্য করে। ফুলকায় থাকা রক্তজালকের সাহায্যে মাছ জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং শ্বসনে উৎপন্ন কার্বন ডাই অক্সাইড বর্জন করে।
[চ] চক্ষু
মাছের চোখ দুটি গােলাকার এবং পল্লববিহীন হয়। এদের চোখ দুটি পাতলা পর্দা বা উপপল্লব দিয়ে ঢাকা থাকে। এর ফলে চোখ জলের ঘর্ষণজনিত আঘাত থেকে রক্ষা পায়, কিন্তু চোখের দৃষ্টি ব্যহত হয় না।
[ছ] পার্শ্বরেখা
এটি মাছের স্পর্শ অনুভূতির গ্রাহক অঙ্গ হিসেবে কাজ করে। এর মাধ্যমে মাছ জলের তাপ, চাপ, গভীরতা বুঝতে পারে এবং এর দ্বারা সহজেই এরা জলের স্রোতের দিক নির্ণয় করতে পারে।
[জ] মায়ােটোম পেশি
মাছের মেরুদণ্ডের দুপাশে বিদ্যমান 'V' আকারের মায়ােটোম পেশির সংকোচন প্রসারণ দ্বারা মাছের দেহ দুপাশে আন্দোলিত হয়।





Previous
Next Post »