উত্তরঃ
ভারতের
অর্থনীতিতে কৃষি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে। ভারতের জাতীয় আয়ের
প্রায় অর্ধেকাংশই কৃষি থেকে উপার্জিত হয়ে থাকে।
ভারতের
কৃষির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য
(Major Characteristics of Agriculture of India)
(ক) জীবিকাসত্ত্বাভিত্তিক
কৃষিঃ কৃষক তার
নিজের ও পরিবারের খাদ্যের প্রয়োজন মেটানোর জন্য যে কৃষিকাজ করে তাকেই
জীবিকাসত্ত্বাভিত্তিক কৃষি বলে। বেশিরভাগ কৃষকই নিজস্ব বা স্থানীয় প্রয়োজন মেটানোর
তাগিদে চাষবাস করে। উৎপাদিত ফসল অভ্যন্তরীণ চাহিদা
মেটাতেই কেবল ব্যবহার করা হয়, বিদেশের বাজারে রপ্তানি করার মতো উদ্বৃত্ত ফসল বিশেষ থাকে না।
(খ) জনসংখ্যার
চাপঃ ভারত বিশ্বের
দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারত। এদেশের জনসংখ্যা বর্তমানে জনবিস্ফোরণের আকার নিয়েছে।
ফলে কৃষিকাজের ওপর প্রবল চাপ বাড়ছে। এক-একটি জমিতে বছরে 3-4 বার ফসল ফলানো হয়। ফলে জমি ও ফসলের গুণমানে
ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। পাশাপাশি প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকায় বিপুল সংখ্যক মানুষ
কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত (70%)।
(গ)
কৃষিতে পশুশক্তির প্রাধান্যঃ
ভারতের অধিকাংশ দরিদ্র কৃষকই চাষের জন্য দামি যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করে আদিম
পদ্ধতিতে পশুশক্তির সাহায্যে চাষবাস করে থাকে। লাঙল,
বলদ দিয়ে জমি তৈরি করার প্রাচীন পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। এমনকি জলসেচের
কাজ চালাতেও পশুশক্তি ব্যবহার করা হয়।
তবে,
বিগত পাঁচদশকে কৃষিতে যন্ত্র নির্ভরতা (ট্রাক্টর,
রীপার, হারভেস্টর, হ্যাক্সিং
মেশিন) ভারতে কৃষিজ ফসলের উৎপাদন প্রায় 7 গুণ বাড়িয়েছে।
(ঘ) মৌসুমী
বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরতাঃ
ভারতের অধিকাংশ কৃষিকাজই প্রধানত মৌসুমি
বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করে। অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টির চাষবাস ব্যহত হয়। তাই উপযুক্ত
পরিমাণে বৃষ্টিপাত কৃষিকাজের জন্য একান্তই প্রয়োজন।
(ঙ) জলসেচের
ব্যবস্থাঃ মৌসুমি বায়ুর
অনিশ্চয়তা, শীতকালীন
বৃষ্টিপাতের অভাব, বৃষ্টিপাতের অসম বণ্টন, উচ্চফলনশীল শস্যের চাষ, মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা প্রভৃতি
কারণে ভারতীয় কৃষিতে অধিক জলসেচের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। শীতকালে রবিশস্যের চাষও
সম্পূর্ণভাবে জলসেচের
ওপর নির্ভর করে।
ওপর নির্ভর করে।
(চ) ক্ষুদ্রাকৃতি
জমিজোতঃ ভারতের
কৃষিজমিগুলি আয়তনে ছোটো হয়ে থাকে। এখানে ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও ভূমিহীন বা ভাগচাষির প্রাধান্য বেশি। ফলে ভারতের হেক্টরপ্রতি
চাষের পরিমাণ বেশ কম।
(ছ) কীটনাশক
ও রাসায়নিক সারের অনিন্ত্রিত ব্যবহারঃ
ভারতে কৃষিজ ফসলের চাহিদা খুব বেশি হওয়ায় দ্রুত জমিপ্রস্তুত ও বেশি পরিমাণে
উৎপাদনের চেষ্টায় অত্যন্ত অনিয়ন্ত্রিতভাবে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার জমিতে প্রয়োগ
করা হয়। বিষাক্ত রাসায়নিক সারের
ব্যবহারের কুফল
উৎপাদিত ফসল ও জনস্বাস্থ্যের ওপর লক্ষ্য করা যায়।
উৎপাদিত ফসল ও জনস্বাস্থ্যের ওপর লক্ষ্য করা যায়।
(জ) খাদ্যশস্যের
প্রাধান্যঃ ভারতে
খাদ্যশস্য (যেমন : ধান, গম, মিলেট প্রভৃতি) চাষই বেশি গুরুত্ব পায়। লাভজনক
নয় বলে পশুখাদ্য (সয়াবিন, ভুট্টা, যব) উৎপাদনের পরিমাণ তুলনায় কম।
(ঝ) পশুখাদ্যের
অভাবঃ ভারতের কৃষির
ক্ষেত্রে পশুখাদ্যের অভাৰ এক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। খাদ্যশস্যের পাশাপাশি আর
কিছুই সেভাবে উৎপাদিত হয় না।
(ঞ) বহুশস্যের
উৎপাদনঃ ভারতের
কৃষিব্যবস্থায় বহু শস্যের উৎপাদন লক্ষ করা যায়।