নদীর বিদ্রোহ: রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর



বাংলা গদ্য
নদীর বিদ্রোহ 
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
প্রতিটি প্রশ্নের মান ৫
১. "আজও সে সেইখানে গিয়া বসিল"- কোথায় গিয়ে বসার কথা বলা হয়েছে? সেখানে বসে নদেরচাঁদ নদীর কোন রূপ দর্শন করেছিল? 
উত্তর: 
সমাজ বাস্তবতার সার্থক রূপকার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত "নদীর বিদ্রোহ" গল্পের নায়ক নদেরচাঁদ প্রতিদিন নদীর ওপর নির্মিত সেতুর মাঝামাঝি অবস্থিত ইট সুরকি আর সিমেন্টের গাঁথা ধারকস্তম্ভের শেষ প্রান্তে বসে নদীকে প্রত্যক্ষ করত। সেদিনও সে সেখানেই গিয়ে বসেছিল। 
নদেরচাঁদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা নদীর ধারেই। তাই নদীর প্রতি তার ভালোবাসা আবাল্য। পরিণত বয়সে এসেও নদীর প্রতি তার আন্তরিকতা এতটুকুও ফিকে হয়নি। 
পাঁচদিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টির জন্য সে নদীর কাছে যেতে পারেনি। তাই বৃষ্টি বন্ধ হতেই সে উদগ্রীব হয়ে তার নদী দেখার নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছিল। কিন্তু নদীর ধারে গিয়ে সে স্তম্বিত হয়ে যায়। পাঁচ দিনের অতি বর্ষণে নদী এক ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছিল; এই কদিনেই তার চার বছরের চেনা নদীটি যেন অপরিচিত হয়ে গেছে। 
ধারক স্তম্ভের উপর বসে সে দেখলো নদীর স্রোত সেই ধারক স্তম্ভে বাধা পেয়ে ফেনিল আবর্ত রচনা করে ওপরের দিকে উঠে আসছে। দেখে মনে হল যেন হাত বাড়িয়ে জলকে স্পর্শ করা যাবে। নদের চাঁদের ভারি আমোদ হলো। নদীর সাথে খেলার লোভে সে পকেট থেকে স্ত্রীকে লেখা চিঠি বের করে জলে ভাসিয়ে দেয়। 
ঘন্টা তিনেক পর আবার আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামল। ভয়ংকর জলতরঙ্গের চাপা গর্জন আর বৃষ্টির শব্দ মিলেমিশে যে ঐকতান সৃষ্টি করেছিল তা শ্রুতিমধুর হলেও ভয়ংকর এই শব্দের অভিঘাত নদেরচাঁদকে বিবশ ও আতঙ্কিত করে তুলল। তার মনে হল নদী যেকোনো সময় সেই সেতু ও বাঁধ ভেঙ্গে নিজেকে মুক্ত করতে পারে।

২. ‘এই ভীষণ মধুর শব্দ শুনিত শুনিতে সর্বাঙ্গ অবশ, অবসন্ন হইয়া আসিতেছে।'—উক্ত শব্দকে ‘ভীষণ মধুর’ এই বৈপরীত্যসূচক বিশেষণে বিশেষিত করার কারণ কী? এই শব্দ শোনার সঙ্গে সর্বাঙ্গ অবশ, অবসন্ন হয়ে আসার সম্পর্ক কী?
উত্তর:
সমাজ বাস্তবতার সার্থক রূপকার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত "নদীর বিদ্রোহ" গল্পের নায়ক  নদেরচাঁদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা নদীর ধারেই। তাই নদীর প্রতি তার ভালোবাসা আবাল্য। পরিণত বয়সে এসেও নদীর প্রতি তার আন্তরিকতা এতটুকুও ফিকে হয়নি। 
পাঁচদিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টির জন্য সে নদীর কাছে যেতে পারেনি। তাই বৃষ্টি বন্ধ হতেই সে উদগ্রীব হয়ে তার নদী দেখার নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছিল। কিন্তু নদীর ধারে গিয়ে সে স্তম্বিত হয়ে যায়। পাঁচ দিনের অতি বর্ষণে নদী এক ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছিল।
ধারক স্তম্ভের উপর বসে সে দেখলো নদীর স্রোত সেই ধারক স্তম্ভে বাধা পেয়ে ফেনিল আবর্ত রচনা করে ওপরের দিকে উঠে আসছে। দেখে মনে হল যেন হাত বাড়িয়ে জলকে স্পর্শ করা যাবে। নদের চাঁদের ভারি আমোদ হলো। 
কিন্ত ঘন্টা তিনেক পর আবার আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামল। ভয়ংকর জলতরঙ্গের চাপা গর্জন আর বৃষ্টির শব্দ মিলেমিশে যে ঐকতান সৃষ্টি করেছিল তা শ্রুতিমধুর হলেও ভয়ংকর এই শব্দের অভিঘাত নদেরচাঁদকে বিবশ ও আতঙ্কিত করে তুলল। শব্দের এই দ্বিমুখী ক্রিয়ার জন্য বৈপরীত্যমূলক "ভীষণ - মধুর" বিশেষণটি ব্যবহৃত হয়েছে। 
ভয় মানুষকে অতিসক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় করে দেয়। সক্রিয়তা তাকে বিপদস্থল থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায় আর নিষ্ক্রিয়তা তাকে সেখানেই আতঙ্কের গভীরে নিমজ্জিত করে। নদীর ভয়ংকরতা, তার রুষ্ট গর্জন ও বৃষ্টির প্রাবল্য সবকিছু মিলিয়ে যে ভয় নদেরচাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছিল তা তাকে বিবশ ও অবসন্ন করে তুলেছিল। সে পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করেও তাই সেখান থেকে উঠে যেতে পারেনি, কেননা তার মানসিক ও শারীরিক জোর সে মুহূর্তে ছিল না।


Previous
Next Post »