মাধ্যমিক ইতিহাসঃ মাধ্যমিক
2021: Madhyamik History: Madhyamik
2021
প্রশ্নঃ পাগলপন্থী বিদ্রোহ বলতে কী বোঝ ? [প্রশ্নমান ০২]
উত্তরঃ উনিশ শতকের প্রথম দিকে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার শেরপুর
অঞ্চলে ১৮২৫ – ১৮২৭ কালপর্বে করিম শাহের নেতৃত্বে পাগলপন্থী আন্দোলন এক
গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন হয়ে দেখা দেয়। পাগলপন্থীরা বাউল জাতীয় এক ধর্মীয় গোষ্ঠী
হিসেবে পরিচিত ছিলেন। হিন্দু ও সুফি – উভয় ধর্মমতের প্রভাব এই ভাবাদর্শে দেখা যায়।
ঐতিহাসিক বিনয়ভূষণ চৌধুরীর মতে পাগলপন্থীরা তাদের আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে
জমিদারদের অপশাসনের বিরুদ্ধে খাজনা বন্ধের আন্দোলন শুরু করেন। করিম শাহের মৃত্যুর
পর টিপু শাহের নেতৃত্বে এই আন্দোলন তীব্র ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়।
সরকারী এক প্রতিবেদনে স্বীকার করা হয়েছে, জমিদার কর্তৃক বেআইনি কর আদায়, ‘খরচা’, ‘মাথট’
ও ‘আবওয়াব’ আদায়ই এই বিদ্রোহের মূল কারণ। তীব্র দমননীতি প্রয়োগ করে, টিপু শাহকে
বন্দী করে ঔপনিবেশিক শাসকেরা এই আন্দোলন দমন করেন।
প্রশ্নঃ বারাসত বিদ্রোহ
কী ? [প্রশ্নমান ০২]
উত্তরঃ সৈয়দ আহমেদের ওয়াহাবি আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৮২৭
খ্রিস্টাব্দে উত্তর চব্বিশ পরগণার মির নিসার আলি বা তিতুমির বারাসত অঞ্চলে ইসলামের
বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য যে আন্দোলন শুরু করেন, তাই বারাসত আন্দোলন নামে পরিচিত।
মুসলমানেরাই দেশের প্রকৃত শাসক, একথা ঘোষণা করে তিনি অত্যাচারী জমিদার, মহাজন ও
ইংরেজ শাসকদের পরিবর্তে তাঁকেই খাজনা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। বাংলার সমকালীন
প্রেক্ষাপটে তার ব্রিটিশ বিরোধিতার সুর নিম্নবর্গীয় প্রান্তিক মানুষদের আকৃষ্ট করে
এবং অতি দ্রুত হিন্দু – মুসলমানের সমবেত সমর্থনে এটি ব্রিটিশ বিরোধী শ্রেণিসংগ্রামে
পরিণত হয়। তিনি নারকেলবেড়িয়া গ্রামে একটি বাঁশের কেল্লা তৈরি করে নিজেকে ‘বাদশাহ’
ঘোষণা করেন। শেষপর্যন্ত লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের নির্দেশে ব্রিটিশ গোলন্দাজ
বাহিনী ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে বাশের কেল্লাটি ধ্বংস করে দেয়। যুদ্ধে তিতুমিরের মৃত্যু
হয় ও বিদ্রোহ স্থিমিত হয়ে পড়ে।
প্রশ্নঃ তরিকা – ই –
মহম্মদীয়া কী ? [প্রশ্নমান ০২]
উত্তরঃ আঠারো শতকের শেষ দিকে আরবের মহম্মদ আবদুল ওয়াহাব ইসলাম
ধর্মের শুদ্ধিকরণের উদ্দেশ্যে ওয়াহাবি আন্দোলন শুরু করেন। তাঁর ভাবশিশ্য
রায়বেরিলির সৈয়দ আহমেদ ভারতে এই আন্দোলনের সূত্রপাত করেন এবং এদেশে আন্দোলনের নাম
দেন তরিকা – ই – মহম্মদীয়া। এই শব্দটির অর্থ হল মহম্মদ নির্দেশিত পথ। বাংলায় এই
আদর্শের ভাবধারা প্রচার করেন মির নিসার আলি বা তিতুমীর। তরিকা – ই – মহম্মদীয়ার মূল
কথা হলো শুদ্ধবাদী ইসলামের যাবতীয় নিয়মকানুন মেনে চলা এবং অমুসলমানদের প্রতি জিহাদ
বা ধর্মযুদ্ধ ঘোষণা করা। তাই তিতুমির অমুসলমান ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন,
যা নিম্নবর্গীয় প্রান্তিক মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় ও হিন্দু –
মুসলমানের সম্মিলিত অংশগ্রহণে ব্রিটিশ বিরোধী শ্রেণিসংগ্রামে পরিণত হয়।