মাধ্যমিক ইতিহাসঃ মাধ্যমিক
2021: Madhyamik History: Madhyamik
2021
প্রশ্নঃ মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল ? [প্রশ্নমান ০২]
প্রশ্নঃ মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল ? [প্রশ্নমান ০২]
উত্তরঃ ১৮৯৯ – ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে
বাংলার পশ্চিমাঞ্চল, ছোটোনাগপুর সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে ‘উলগুলান’
বা মুন্ডা বিদ্রোহ হয়েছিল। এই বিদ্রোহের মূল উদ্দেশ্য ছিল ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দের ‘অরণ্য
আইন’ বাতিল করে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের অরণ্যের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া। এছাড়াও
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কারণে ওই অঞ্চলে আগত বহিরাগত মহাজন বা ‘দিকু’ দের বিতাড়িত
করে যৌথ মালিকানাভিত্তিক ‘খুঁৎকাঠি প্রথা’ – র পুনঃপ্রবর্তন করা ছিল আন্দোলনের
আরেকটি প্রধান উদ্দেশ্য। মুন্ডারা বেগার প্রথার অবসান ও মিশনারীদের উৎখাতের
পক্ষপাতী ছিলেন।
প্রশ্নঃ সন্ন্যাসী
বিদ্রোহ কোন পরিস্থিতিতে শুরু হয়েছিল ? [প্রশ্নমান ০২]
উত্তরঃ ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় মজনু শাহ, চিরাগ আলি, দেবী
চৌধুরাণী, ভবানীপাঠক প্রমুখের নেতৃত্বে অন্যতম দীর্ঘস্থায়ী সন্ন্যাসী – ফকির বিদ্রোহ
শুরু হয়। সেই সময়ে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে নাগা ও গিরি সম্প্রদায়ের বেশ কিছু
সন্ন্যাসী ও সুফি সম্প্রদায়ের কিছু ফকির স্থায়ীভাবে ঢাকা, দিনাজপুর, বগুড়া অঞ্চলে
বসবাস করতেন। এই সন্ন্যাসী ও ফকিরেরা দল বেঁধে তীর্থযাত্রায় যেতেন। ব্রিটিশ সরকার
তাদের ওপর তীর্থকর আরোপ করলে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পাশাপাশি নতুন ভূমিরাজস্ব
ব্যবস্থায় বর্ধিত রাজস্ব হার ও ব্যবসা বাণিজ্যের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ তাদেরকে
অসন্তুষ্ট করেছিল। তাই শেষ পর্যন্ত তারা সশস্ত্র বিদ্রোহের পথ বেছে নেয়।
প্রশ্নঃ দেবী সিংহ কে
ছিলেন ? [প্রশ্নমান ০২]
উত্তরঃ দেবী সিংহ ছিলেন ইংরেজ সরকার নিযুক্ত রংপুরের ইজারাদার।
তিনি ঔপনিবেশিক শাসকদের মদত ও সমর্থনে পাঁচশালা বন্দোবস্তের সুযোগ নিয়ে কৃষকদের
ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা চাপিয়ে দেন। ফলে তারা মহাজনের কাছে জমি বন্ধক রেখে অত্যধিক
সুদের হারে ঋণ নিতে বাধ্য হতো এবং শেষ পর্যন্ত বন্ধকীকৃত জমি পুনরুদ্ধার করতে পারত
না । এর প্রতিবাদে রংপুর ও দিনাজপুরের ক্ষুব্ধ কৃষকেরা দিরজি নারায়ণ, দয়ারাম শীল নুরুলউদ্দিন
প্রমুখের নেতৃত্বে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে (১৭৮৩) । অবশেষে রংপুরের
কালেক্টর গুডল্যান্ডের বাহিনীর হাতে বিদ্রোহী কৃষকরা পরাজিত হন। দেবী সিংহ নিজেও
ইজারাদারের পদ থেকে অপসারিত হন।
প্রশ্নঃ নীলকর সাহেবরা
কৃষকদের ওপর কীভাবে অত্যাচার চালাত? [প্রশ্নমান ০২]
উত্তরঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের পর নীল বিদ্রোহ (১৮৫৯) ছিল
ভারতের ইতিহাসের একটি যুগান্তকারী প্রতিরোধ আন্দোলন। বাংলার সাধারণ কৃষকদের ওপর
নীলকরদের তীব্র অত্যাচার ছিল এই আন্দোলনের কারণ। নীলকরেরা দাদন প্রথার মাধ্যমে
কৃষকদের নীলচাষে বাধ্য করত। নীলচাষে নিমরাজি কৃষকদের ওপর সীমাহীন অত্যাচার করা
হতো। চাষিকে হত্যা, বেঁধে রাখা, প্রহার করা, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, গোরু – বাছুর ছিনিয়ে
নেওয়া, স্ত্রী – সন্তানকে লাঞ্ছনা করা – কোনও ধরণের শাস্তিই বাদ যেত না। আদালত বা
থানা – পুলিশে অভিযোগ জানিয়েও চাষিরা সুবিচার পেত না।
প্রশ্নঃ শরিয়তউল্লাহ
কেন ফরাজি আন্দোলন শুরু করেন ? [প্রশ্নমান ০২]
উত্তরঃ বাংলা তথা ভারতের ফরাজি আন্দোলনের প্রাণপুরুষ হলেন ফরিদপুর
অঞ্চলের হাজি শরিয়তউল্লাহ। ফরাজি শব্দটির অর্থ ‘আল্লাহর আদেশ’। মাত্র আঠারো বছর
বয়সে শরিয়তউল্লাহ মক্কায় হজ করতে দিয়ে সেখানকার ওয়াহাবি নেতাদের দ্বারা প্রভাবিত
হন ও দেশে ফিরে এই আন্দোলন সুরু করেন। এই
আন্দোলন ছিল একটি ধর্মীয় পুনর্জাগরণের আন্দোলন। তার উদ্দেশ্য ভিল ইসলাম ধর্মের
শুদ্ধিকরণ, সংস্কার এবং ভারতের সকল মুসলমানকে কোরান নির্দেশিত পাঁচটি অনুশাসনে
অনুপ্রাণিত করা। তিনি ভারতবর্ষকে ‘দার – উল – ইসলাম’ বা ইসলামের দেশে পরিণত করার
উদ্দেশ্যে এই আন্দোলন শুরু করেছিলেন।
প্রশ্নঃ পাবনা বিদ্রোহ
কেন হয়েছিল ?
উত্তরঃ ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে পাবনার সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে ইউসুফ – শাহি –
পরগণায় ব্যাপকভাবে পাটের উৎপাদন কমে গেলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা যায়। তা
সত্ত্বেও স্থানীয় জমিদারেরা রাজস্বের হার না কমিয়ে বরং তা আদায়ে কৃষকদের ওপর জুলুম
শুরু করে। অত্যাচারিত কৃষকরা ‘পাবনা রায়ত সংঘ’ গড়ে তুলে এলাকার সম্পন্ন কৃষক ঈশান
রায়ের নেতৃত্বে জমিদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলেন, যা পাবনা বিদ্রোহ
নামে পরিচিত। এই বিদ্রোহে হিন্দু – মুসলমান; উভয় সম্প্রদায়ের কৃষকরা সক্রিয়ভাবে
অংশগ্রহণ করেছিল। পরবর্তীকালে এই বিদ্রোহ গোটা পাবনা জেলায় ছড়িয়ে পড়ে।