উত্তরঃ
বসতি স্থাপনের অনুকূল
পরিবেশ, জীবিকা
নির্বাহের সুবিধা প্রভৃতির তারতম্যের কারণে ভারতের সর্বত্র জনসংখ্যার বন্টন সমান
নয়। এই অসম জনবন্টনের কারনগুলিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা – প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক।
প্রাকৃতিক কারণঃ
[০১] ভূপ্রকৃতি –
ভারতের হিমালয়ের
পার্বত্য অঞ্চল, উত্তর – পূর্বের পার্বত্য অঞ্চল এবং দাক্ষিণাত্যের
মালভূমি অঞ্চলে দুর্গম ও তরঙ্গায়িত ভূপ্রকৃতির জন্য কৃষি, শিল্প
প্রভৃতি অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপগুলি সমভূমি অঞ্চল অপেক্ষা কম উন্নত। ফলে এই
অঞ্চলগুলির জনঘনত্ব খুব কম। অন্য দিকে, গাঙ্গেয় সমভূমি,
শতদ্রু সমভূমি, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা এবং
পশ্চিম ও পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলের অনুকূল ভূপ্রকৃতি কৃষি, শিল্প, ব্যবসাবাণিজ্য ইত্যাদির উন্নতিতে সাহায্য
করেছে। ফলে সমভূমি অঞ্চলে ঘন জনবসতি গড়ে উঠেছে।
[০২] নদনদী –
নদী থেকে পানীয় ও সেচের
জল, শিল্পের
প্রয়োজনীয় জল ইত্যাদি সংগ্রহ করা হয়। নদীপথে নৌ – পরিবহন গড়ে
ওঠে এবং নদী থেকে মাছ ধরা হয়। এসব কারণে নদী তীরবর্তী অঞ্চলে ঘন জনবসতি দেখা যায়।
ভারতের শতদ্রু, গঙ্গা, যমুনা, মহানদী, কৃষ্ণা, কাবেরী
প্রভৃতি নদীর তীরে অসংখ্য শহর গড়ে উঠেছে। ভারতের জনসংখ্যার প্রায় 30 শতাংশ মানুষ গঙ্গা নদীর অববাহিকায় বসবাস করে।
[০৩] জলবায়ু –
সাধারণত উষ্ণ ও আর্দ্র
জলবায়ু অঞ্চলে কৃষি ব্যবস্থার বেশি উন্নতি ঘটে ও ঘন জনবসতি দেখা যায়। শতদ্রু, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র
ইত্যাদি নদী অববাহিকার অনুকূল জলবায়ু সারাবছর ধরে চাষাবাদ করতে সাহায্য করে। ফলে
এই অঞ্চলে জনঘনত্ব বেশি। অন্য দিকে, উষ্ণ ও শুষ্ক রাজস্থানের
মরু অঞ্চল এবং শীতল পার্বত্য অঞ্চল অত্যন্ত জনবিরল।
[০৪] মৃত্তিকা –
বন্ধুর ভূমিরূপ হলেও
দক্ষিণ ভারতের কৃষ্ণ মৃত্তিকা অঞ্চল খুবই উর্বর ও কৃষিকাজের অনুকূল। তাই এখানে
জনবসতি বেশি। আবার গঙ্গা –
সিন্ধু – ব্রহ্মপুত্র সমভূমি অঞ্চলের উর্বর
পলি মৃত্তিকার কারণে এই অঞ্চলে ঘন জনপদ গড়ে উঠেছে। রাজস্থানের বালুকণা সমৃদ্ধ
মৃত্তিকায় কৃষিকাজ ভালো হয় না বলে এই অঞ্চলে বিরল জনবসতি দেখা যায়।
[০৫] প্রাকৃতিক সম্পদ –
খনিজ সম্পদের উত্তোলন
কেন্দ্রগুলিতে ঘন জনবসতি গড়ে ওঠে। রানিগঞ্জ, ঝরিয়া, বোকারো, রামগড় প্রভৃতি শহর খনিজ সম্পদের উত্তোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। অন্য
দিকে, ঘন অরণ্যাবৃত অঞ্চলের জনঘনত্ব নানা কারণে কম হয়।
অরণ্যাবৃত অঞ্চলে কৃষি, শিল্প ইত্যাদি গড়ে ওঠে না এবং পরিবহন
ব্যবস্থা অনুন্নত প্রকৃতির হয়। এসব কারণে খুব কম সংখ্যক লোক অরণ্যাঞ্চলে বসবাস
করে।
অর্থনৈতিক কারণঃ
[০১] পরিবহন ব্যবস্থা –
সড়কপথ, রেলপথ, জলপথ
ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে যুক্ত করা হয়। উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা
শিল্প, ব্যবসাবাণিজ্য ইত্যাদি গড়ে তুলতে সাহায্য করে। গঙ্গা
নদীর অববাহিকায় উন্নত সড়কপথ, রেলপথ ও জলপথ পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে
ওঠায় ঘন জনবসতি গড়ে উঠেছে।
[০২] শিল্প ও বাণিজ্য –
শিল্প যেখানে গড়ে ওঠে, সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ
থাকায় অন্যান্য অঞ্চল থেকে প্রচুর সংখ্যক লোক সেখানে বসতি স্থাপন করে। এর ফলে
হাওড়া – হুগলি শিল্পাঞ্চল, মুম্বাই
আহমেদাবাদ শিল্পাঞ্চলে ঘন বসতি গড়ে উঠেছে।
[০৩] কৃষি –
কৃষিতে উন্নত
অঞ্চলগুলিতে যেমন জনঘনত্ব বেশি, তেমনি কৃষিতে অনুন্নত অঞ্চলগুলিতে জনঘনত্ব খুবই
কম। ভারতের যেসব অঞ্চলে বহুফসলি জমির পরিমাণ বেশি, সেসব
অঞ্চলের জনঘনত্ব কৃষিপ্রধান অঞ্চলগুলির মধ্যে বেশি।
সাংস্কৃতিক কারণঃ
জ্ঞান বিজ্ঞানের উন্নতি, নগরায়ণ, শিক্ষাকেন্দ্র
বা ধর্মীয় স্থানকে কেন্দ্র করেও ঘন বসতি গড়ে ওঠে।