যেসব জৈব রাসায়নিক পদার্থ জীবদেহের নির্দিষ্ট কতগুলি কলাকোষ (উদ্ভিদের ভাজক কলা) থেকে বা কোন বিশেষ ধরনের অঙ্গ (প্রাণিদেহের অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি) থেকে নিঃসৃত হয়ে নির্দিষ্ট উপায়ে বাহিত হয় এবং সাধারণত উৎপত্তিস্থল থেকে দূরে সীমিত বা বিস্তৃত অঞ্চলের কাজকে নিয়ন্ত্রণ করে তাকে হরমােন (Hormone) বলে।
হরমােন কথাটির আক্ষরিক অর্থ গ্রীক শব্দ Hormaein থেকে হরমােন কথাটি এসেছে। হরমিন কথাটির অর্থ “আমি জাগ্রত করি বা উত্তেজনা সৃষ্টি করি”।
প্রথম আবিষ্কৃত হরমােন-- অক্সিন।
হরমোনের বৈশিষ্ট্যঃ
(i) হরমােন একধরনের জটিল জৈব যৌগ যা খুব কম মাত্রায় দেহে কাজ করে।
(ii) হরমােন কোষ বা নালীবিহীন গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয়।
(iii) বেশির ভাগ হরমােন উৎপত্তি স্থান থেকে সংবহনতন্ত্রের সাহায্যে দূরে গিয়ে কাজ করে।
(iv) এদের কাজ শেষ হলে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় অথবা দেহ থেকে অপসারিত হয়।
(v) উৎস- গ্রন্থি অর্থাৎ যে গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয় তার বাইরে এরা কখনও ভবিষ্যতের জন্য জমা থাকে না।
(vi) দেহের যে কোন শারীরবৃত্তীয় কাজ এক বা একাধিক হরমােন দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়।
(vii) সাধারণত এরা জলে দ্রব্য ও নিম্ন আণবিক ওজনের হয়। (viii) এরা যে কোন জৈবনিক কাজকে প্রভাবিত করে কিন্তু কোন বিক্রিয়াকে আরম্ভ করাতে পারে না।
(ix) হরমােন জীবদেহের বিভিন্ন কোষের মধ্যে রাসায়নিক সংযােগ সাধন করে। তাই হরমােনকে কেমিক্যাল কো-অর্ডিনেটের বা রাসায়নিক সমন্বয়ক বলা হয়।
(x) হরমােন বিভিন্ন কোষে রাসায়নিক বার্তা পাঠায়।
উদ্ভিদ হরমােনের শ্রেণীবিভাগঃ
উদ্ভিদ হরমােনকে প্রধানত তিন ভাগে বিভক্ত করা যায়, যথা -
(1) প্রাকৃতিক হরমােনঃ
উদ্ভিদদেহে যে সব হরমােন সংশ্লেষিত হয় তাদের প্রাকৃতিক
হরমােন বলা হয়। উদাহরণ- অক্সিন, জিব্বারেলিন, সাইটোকাইনিন এবং জিয়াটিন।
(2) কৃত্রিম হরমােনঃ
যে সব রাসায়নিক পদার্থ কৃত্রিমভাবে রসায়নাগারে প্রস্তুত হয় এবং প্রাকৃতিক হরমােনের মত কাজ করে তাদের কৃত্রিম হরমােন বলে। উদাহরণ— ইন্ডোল প্রােপিয়নিক অ্যাসিড, ন্যাপথক্সি অ্যাসিটিক অ্যাসিড, 2,4- ডাইক্লোরােফেনােক্সি অ্যাসিটিক অ্যাসিড ও ইণ্ডোল বেনজয়িক অ্যাসিড।
(3) প্রকল্পিত হরমােনঃ
এই জাতীয় হরমােন উদ্ভিদদেহে সংশ্লেষিত হলেও এদের রাসায়নিক গঠন ও কাজ সম্বন্ধে সঠিক ভাবে জানা যায়নি। তাই তাদের প্রকল্পিত হরমােন বলে। উদাহরণঃ ফ্লোরিজেন, রাইজোকলাইন, ফাইলােকলাইন, কলােকলাইন, ডরমিন, ভারনালিন।
উদ্ভিদের কাণ্ড, মুকুলবরণী, মূলের আগায় ও বর্ধণশীল অঞ্চল থেকে উৎপন্ন ইণ্ডোল বর্গযুক্ত যে সব জৈব অম্ন উদ্ভিদের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে তাকে অক্সিন [Auxin) বলে।
অক্সিনের বৈশিষ্ট্যঃ
(i) অক্সিন একধরনের প্রাকৃতিক হরমােন।
(ii) এতে কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন থাকে এবং এর রাসায়নিক নাম ইণ্ডোল অ্যাসিটিক আসিড (Indole Acetic Acid)।
(iii) অক্সিন তিন প্রকারের হয়, যেমন— অক্সিন-১.
অক্সিন-b, এবং হেটারাে-অক্সিন।
(iv) ট্রিপটোফেন নামে অ্যামাইনাে অ্যাসিড থেকে পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের ফলে মূল ও কাণ্ডের অগ্রভাগে অক্সিন উৎপন্ন হয়।
(v) কাণ্ডের আগায়, বীজে ও বর্ধনশীল পাতায় অক্সিন বেশি পরিমাণে ও মূলের আগায় সামান্য পরিমাণে সংশ্লেষিত হয়।
(vi) অক্সিনের ক্রিয়া প্রধানত মেরুবর্তী।
(vii) অক্সিন সাধারণত দেহের নিচের দিকে প্রবাহিত হয়। (viii) অক্সিনের ক্রিয়া আলােক উৎসের বিপরীত দিকে অর্থাৎ অন্ধকারে ভাল হয়।
অক্সিনের কাজঃ
(i) কোষের বৃদ্ধিঃ
অক্সিন সেলুলেজ (Cellulase) নামে উৎসেচকের সাহায্যে সেলুলােজ দিয়ে তৈরি কোষ প্রাচীরের নমনীয়তাকে বাড়ায়। এর ফলে কোষের আয়তনের বৃদ্ধি ঘটে।
(ii) কোষ বিভাজনঃ
অক্সিন সাইটোকাইনিনের উপস্থিতিতে উদ্ভিদের বর্ধনশীল অংশের কোষের নিউক্লিয়াসের বিভাজন ঘটিয়ে কোষ বিভাজনে সাহায্য করে ফলে উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে অংশ নেয়।
(iii) প্রােটিন সংশ্লেষঃ
অক্সিন প্রােটিন সংশ্লেষে বিশেষ সাহায্য করে।
(iv) উদ্ভিদ-অঙ্গের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুরণঃ
অক্সিন উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গের কলার বৃদ্ধি ও পরিস্ফুরণে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। এছাড়া উদ্ভিদের মূল, কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল প্রভৃতির গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
(v) অগ্ৰমুকুলের প্রাধান্যঃ
অক্সিন অমুকুলের বৃদ্ধি ও কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি রােধ করে।
(vi) পাতা ও ফুলের মােচন রােধঃ
অক্সিন ফল ও পাতার পতন বা মােচন রােধ করে।
(vii) ফল গঠনঃ
নিষেকের পর ডিম্বাশয়ে অক্সিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে ডিম্বক বীজে ও ডিম্বাশয় ফলে রূপান্তরিত হয়। অনেকসময় নিষেক ছাড়াই ডিম্বাশয় অক্সিনের প্রভাবে ফলে পরিণত হয়। এই ফলে কোন বীজ হয় না, যেমন কলা, পেঁপে, আপেল, আঙ্গুর প্রভৃতি। বীজহীন ফলের উৎপত্তিকে পার্থেনােকাৰ্পি বলে।
(vii) মূলের বৃদ্ধি— এই হরমোেন সামান্য পরিমাণে প্রয়ােগ করলে মূলের বৃদ্ধি ঘটে।
(ix) আলােকবর্তী ও অভিকর্ষবর্তী চলনে নিয়ন্ত্রণঃ আলােকবর্তী ও অভিকর্ষবর্তী চলন অক্সিনের সাহায্যে নিয়ন্ত্রিত হয়।
(x) অঙ্গজ জনন ও লিঙ্গ নির্ধারণঃ
এই হরমােন অঙ্গজ জনন ও উদ্ভিদের লিঙ্গ নির্ধারণেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
(xi) আগাছা দমনঃ
চাষের জমিতে আগাছা বিনাশ করার জন্য 2, 4-D নামে কৃত্রিম অক্সিন হরমােন প্রয়ােগ করা হয়। আগাছা মাটি থেকে ও পাতা থেকে হরমােনের দ্রবণকে শােষিত করে মরে যায়। আগাছা নির্মূলে হরমােনের পরিমাণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয়।
উদ্ভিদ হরমােনকে প্রধানত তিন ভাগে বিভক্ত করা যায়, যথা -
(1) প্রাকৃতিক হরমােনঃ
উদ্ভিদদেহে যে সব হরমােন সংশ্লেষিত হয় তাদের প্রাকৃতিক
হরমােন বলা হয়। উদাহরণ- অক্সিন, জিব্বারেলিন, সাইটোকাইনিন এবং জিয়াটিন।
(2) কৃত্রিম হরমােনঃ
যে সব রাসায়নিক পদার্থ কৃত্রিমভাবে রসায়নাগারে প্রস্তুত হয় এবং প্রাকৃতিক হরমােনের মত কাজ করে তাদের কৃত্রিম হরমােন বলে। উদাহরণ— ইন্ডোল প্রােপিয়নিক অ্যাসিড, ন্যাপথক্সি অ্যাসিটিক অ্যাসিড, 2,4- ডাইক্লোরােফেনােক্সি অ্যাসিটিক অ্যাসিড ও ইণ্ডোল বেনজয়িক অ্যাসিড।
(3) প্রকল্পিত হরমােনঃ
এই জাতীয় হরমােন উদ্ভিদদেহে সংশ্লেষিত হলেও এদের রাসায়নিক গঠন ও কাজ সম্বন্ধে সঠিক ভাবে জানা যায়নি। তাই তাদের প্রকল্পিত হরমােন বলে। উদাহরণঃ ফ্লোরিজেন, রাইজোকলাইন, ফাইলােকলাইন, কলােকলাইন, ডরমিন, ভারনালিন।
অক্সিন
অক্সিনের সংজ্ঞাঃ উদ্ভিদের কাণ্ড, মুকুলবরণী, মূলের আগায় ও বর্ধণশীল অঞ্চল থেকে উৎপন্ন ইণ্ডোল বর্গযুক্ত যে সব জৈব অম্ন উদ্ভিদের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে তাকে অক্সিন [Auxin) বলে।
অক্সিনের বৈশিষ্ট্যঃ
(i) অক্সিন একধরনের প্রাকৃতিক হরমােন।
(ii) এতে কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন থাকে এবং এর রাসায়নিক নাম ইণ্ডোল অ্যাসিটিক আসিড (Indole Acetic Acid)।
(iii) অক্সিন তিন প্রকারের হয়, যেমন— অক্সিন-১.
অক্সিন-b, এবং হেটারাে-অক্সিন।
(iv) ট্রিপটোফেন নামে অ্যামাইনাে অ্যাসিড থেকে পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের ফলে মূল ও কাণ্ডের অগ্রভাগে অক্সিন উৎপন্ন হয়।
(v) কাণ্ডের আগায়, বীজে ও বর্ধনশীল পাতায় অক্সিন বেশি পরিমাণে ও মূলের আগায় সামান্য পরিমাণে সংশ্লেষিত হয়।
(vi) অক্সিনের ক্রিয়া প্রধানত মেরুবর্তী।
(vii) অক্সিন সাধারণত দেহের নিচের দিকে প্রবাহিত হয়। (viii) অক্সিনের ক্রিয়া আলােক উৎসের বিপরীত দিকে অর্থাৎ অন্ধকারে ভাল হয়।
অক্সিনের কাজঃ
(i) কোষের বৃদ্ধিঃ
অক্সিন সেলুলেজ (Cellulase) নামে উৎসেচকের সাহায্যে সেলুলােজ দিয়ে তৈরি কোষ প্রাচীরের নমনীয়তাকে বাড়ায়। এর ফলে কোষের আয়তনের বৃদ্ধি ঘটে।
(ii) কোষ বিভাজনঃ
অক্সিন সাইটোকাইনিনের উপস্থিতিতে উদ্ভিদের বর্ধনশীল অংশের কোষের নিউক্লিয়াসের বিভাজন ঘটিয়ে কোষ বিভাজনে সাহায্য করে ফলে উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে অংশ নেয়।
(iii) প্রােটিন সংশ্লেষঃ
অক্সিন প্রােটিন সংশ্লেষে বিশেষ সাহায্য করে।
(iv) উদ্ভিদ-অঙ্গের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুরণঃ
অক্সিন উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গের কলার বৃদ্ধি ও পরিস্ফুরণে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। এছাড়া উদ্ভিদের মূল, কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল প্রভৃতির গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
(v) অগ্ৰমুকুলের প্রাধান্যঃ
অক্সিন অমুকুলের বৃদ্ধি ও কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি রােধ করে।
(vi) পাতা ও ফুলের মােচন রােধঃ
অক্সিন ফল ও পাতার পতন বা মােচন রােধ করে।
(vii) ফল গঠনঃ
নিষেকের পর ডিম্বাশয়ে অক্সিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে ডিম্বক বীজে ও ডিম্বাশয় ফলে রূপান্তরিত হয়। অনেকসময় নিষেক ছাড়াই ডিম্বাশয় অক্সিনের প্রভাবে ফলে পরিণত হয়। এই ফলে কোন বীজ হয় না, যেমন কলা, পেঁপে, আপেল, আঙ্গুর প্রভৃতি। বীজহীন ফলের উৎপত্তিকে পার্থেনােকাৰ্পি বলে।
(vii) মূলের বৃদ্ধি— এই হরমোেন সামান্য পরিমাণে প্রয়ােগ করলে মূলের বৃদ্ধি ঘটে।
(ix) আলােকবর্তী ও অভিকর্ষবর্তী চলনে নিয়ন্ত্রণঃ আলােকবর্তী ও অভিকর্ষবর্তী চলন অক্সিনের সাহায্যে নিয়ন্ত্রিত হয়।
(x) অঙ্গজ জনন ও লিঙ্গ নির্ধারণঃ
এই হরমােন অঙ্গজ জনন ও উদ্ভিদের লিঙ্গ নির্ধারণেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
(xi) আগাছা দমনঃ
চাষের জমিতে আগাছা বিনাশ করার জন্য 2, 4-D নামে কৃত্রিম অক্সিন হরমােন প্রয়ােগ করা হয়। আগাছা মাটি থেকে ও পাতা থেকে হরমােনের দ্রবণকে শােষিত করে মরে যায়। আগাছা নির্মূলে হরমােনের পরিমাণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয়।