মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান
উদ্ভিদের চলন
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলী
প্রশ্নঃ সংবেদনশীলতা কাকে বলে ?
উত্তরঃ
পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীন উদ্দীপকের প্রভাবে জীবের সাড়াপ্রদানের ক্ষমতাকে সংবেদনশীলতা বলে।
প্রশ্নঃ উদ্দীপক কাকে বলে ?
উত্তরঃ
যে বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ অবস্থা বা পদার্থ জীবদেহে এক বিশেষ অনুভূতি সৃষ্টি করে জীবকে প্রতিক্রিয়া বা সাড়াপ্রদানে সক্ষম করে তোলে, তাকে উদ্দীপক বলে।
প্রশ্নঃ কে প্রথম প্রমাণ করেন যে, উদ্ভিদের প্রাণ আছে ?
উত্তরঃ
বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু ক্রেস্কোগ্রাফ নামক যন্ত্রের সাহায্যে প্রমাণ করেন, উদ্ভিদের প্রাণ আছে।
প্রশ্নঃ উদ্ভিদদেহে ‘রিফ্লেক্স আর্ক’ – এর অস্তিত্ব প্রমাণ করতে জগদীশচন্দ্র বসু কোন যন্ত্র ব্যবহার করেন ?
উত্তরঃ
উদ্ভিদদেহে ‘রিফ্লেক্স আর্ক’ – এর অস্তিত্ব প্রমাণ করতে জগদীশচন্দ্র বসু রেজোন্যান্ট রেকর্ডার নামক যন্ত্র ব্যবহার করেন
প্রশ্নঃ চলন কাকে বলে ?
উত্তরঃ
যে জৈবনিক প্রক্রিয়ায় জীব কোনো স্থানে আবদ্ধ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বা উদ্দীপকের প্রভাবে দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিভিন্ন দিকে সঞ্চারিত করে, তাকে চলন বলে।
প্রশ্নঃ উদ্ভিদের চলনের উদ্দেশ্য কি কি ?
উত্তরঃ
উদ্ভিদের চলনের মূল উদ্দেশ্যগুলি হলো –
[০১] সালোকসংশ্লেষ পদ্ধতিতে খাদ্য প্রস্তুত করার সময় উদ্ভিদের মূল জল সংগ্রহ করার জন্য জলের দিকে অগ্রসর হয়।
[০২] প্রজননের জন্য উদ্ভিদের রেণু বিভিন্ন পদ্ধতিতে বাহিত হয়।
[০৩] আত্মরক্ষার জন্য উদ্ভিদ আত্মরক্ষামূলক দেহাংশ গঠন করে।
প্রশ্নঃ আবিষ্ট বা ট্যাকটিক চলন কাকে বলে ?
উত্তরঃ
বাইরের উদ্দীপকের প্রভাবে উদ্ভিদের স্থান পরিবর্তনকে আবিষ্ট বা ট্যাকটিক চলন বলে। যেমন – ফার্নের শুক্রাণু ম্যালিক অ্যাসিডের আকর্ষণে ডিম্বাণুর দিকে অগ্রসর হয়।
প্রশ্নঃ ফটোট্যাকটিক চলন কাকে বলে ?
উত্তরঃ
আলোর প্রভাবে উদ্ভিদ অঙ্গের স্থান পরিবর্তনকে ফটোট্যাকটিক চলন বা আলোক অভিমুখী চলন বলে।যেমন – ভলভক্স নামক শৈবাল স্বল্প আলোর দিকে অগ্রসর হয়, কিন্তু প্রখর আলো থেকে দূরে সরে যায়।
প্রশ্নঃ আলোক অনুকূলবর্তী চলন কাকে বলে ?
উত্তরঃ
যে ট্রপিক চলনে উদ্ভিদ অঙ্গ আলোর উৎসের গতিপথের দিকে অগ্রসর হয়, তাকে আলোক অনুকূলবর্তী চলন বলে। যেমন – উদ্ভিদের কান্ড ও শাখাপ্রশাখা আলোর উৎসের গতিপথের দিকে অগ্রসর হয়।
প্রশ্নঃ আলোক প্রতিকূলবর্তী চলন কাকে বলে ?
উত্তরঃ
যে ট্রপিক চলনে উদ্ভিদ অঙ্গ আলোর উৎসের গতিপথের বিপরীত দিকে অগ্রসর হয়, তাকে আলোক অনুকূলবর্তী চলন বলে। যেমন – উদ্ভিদের মূল আলোর উৎসের গতিপথের বিপরীত দিকে অগ্রসর হয়।
প্রশ্নঃ আবিষ্ট বক্রচলন বলতে কী বোঝ ?
উত্তরঃ
বাহ্যিক উদ্দীপকের প্রভাবে বর্ধিষ্ণু অঞ্চলের অসমান বৃদ্ধি বা কোশের রসস্ফীতির তারতম্যের কারণে উদ্ভিদ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালন করে। উদ্ভিদের এই রকম অঙ্গ সঞ্চালনকে আবিষ্ট বক্রচলন বলে।
প্রশ্নঃ আবিষ্ট বক্রচলন কয়প্রকার ও কী কী ?
উত্তরঃ
আবিষ্ট বক্রচলন দুইপ্রকার। যথা – ট্রপিক চলন ও ন্যাস্টিক চলন।
প্রশ্নঃ ট্রপিক চলন কাকে বলে ?
উত্তরঃ
বাহ্যিক উদ্দীপকের গতিপথ অনুসারে উদ্ভিদ অঙ্গের অঙ্গ সঞ্চালন বা বক্রচলনকে ট্রপিক চলন বলে।
প্রশ্নঃ ট্রপিক চলন কয় প্রকার ও কি কি ?
উত্তরঃ
ট্রপিক চলন তিন প্রকার। যথা – ফটোট্রপিক চলন, জিওট্রপিক চলন ও হাইড্রোট্রপিক চলন।
প্রশ্নঃ ফটোট্রপিক চলন কাকে বলে ?
উত্তরঃ
আলোর গতিপথ অনুসারে উদ্ভিদ অঙ্গের অঙ্গ সঞ্চালন বা আবিষ্ট বক্রচলনকে ফটোট্রপিক চলন বলে। যেমন – উদ্ভিদের কান্ড ও শাখাপ্রশাখা সূর্যের আলোর দিকে বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্নঃ জিওট্রপিক চলন কাকে বলে ?
উত্তরঃ
উদ্ভিদ অঙ্গের সঞ্চালন বা আবিষ্ট বক্রচলন যখন অভিকর্ষের গতিপথ অনুসারে হয় তখন তাকে জিওট্রপিক চলন বলে। যেমন – অভিকর্ষ বলের প্রভাবে উদ্ভিদের মূল মাটির গভীরে প্রবেশ করে।
প্রশ্নঃ অনুকূল অভিকর্ষবর্তী চলন কাকে বলে ?
উত্তরঃ
যে ট্রপিক চলনে উদ্ভিদ অঙ্গ অভিকর্ষ বলের দিকে বৃদ্ধি পায়, তাকে অনুকূল অভিকর্ষবর্তী চলন বলে। যেমন – অভিকর্ষ বলের প্রভাবে উদ্ভিদের মূল মাটির গভীরে প্রবেশ করে।
প্রশ্নঃ প্রতিকূল অভিকর্ষবর্তী চলন কাকে বলে ?
উত্তরঃ
যে ট্রপিক চলনে উদ্ভিদ অঙ্গ অভিকর্ষ বলের বিপরীত দিকে বৃদ্ধি পায়, তাকে প্রতিকূল অভিকর্ষবর্তী চলন বলে।
যেমন – উদ্ভিদের কান্ড ও শাখাপ্রশাখা অভিকর্ষ বলের বিপরীত দিকে বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্নঃ তির্যক অভিকর্ষবর্তী চলন কাকে বলে ?
উত্তরঃ
যে ট্রপিক চলনে উদ্ভিদ অঙ্গ অভিকর্ষ বলের সঙ্গে তির্যক ভাবে বৃদ্ধি পায়, তাকে তির্যক অভিকর্ষবর্তী চলন বলে।যেমন – উদ্ভিদের শাখামূলগুলি অভিকর্ষ বলের সঙ্গে তির্যকভাবে বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্নঃ হাইড্রোট্রপিক চলন কাকে বলে ?
উত্তরঃ
উদ্ভিদ অঙ্গের সঞ্চালন বা আবিষ্ট বক্রচলন যদি জলের উৎস অনুসারে হয়, তাহলে তাকে হাইড্রোট্রপিক চলন বলে। যেমন – উদ্ভিদের মূল সর্বদা জলের উৎসের দিকে বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্নঃ ন্যাস্টিক চলন কাকে বলে ?
উত্তরঃ
উদ্ভিদ অঙ্গের সঞ্চালন বা আবিষ্ট বক্রচলন যদি উদ্দীপকের তীব্রতা অনুসারে হয়, তবে তাকে ন্যাস্টিক চলন বলে।
প্রশ্নঃ ন্যাস্টিক চলন কয়প্রকার ও কী কী ?
উত্তরঃ
ন্যাস্টিক চলন চার প্রকার। যথা – ফটোন্যাস্টিক চলন, থার্মোন্যাস্টিক চলন, কেমোন্যাস্টিক চলন ও সিসমোন্যাস্টিক চলন।
প্রশ্নঃ ফটোন্যাস্টিক চলন কাকে বলে ?
উত্তরঃ
আলোর তীব্রতার ওপর নির্ভর করে উদ্ভিদ অঙ্গের মধ্যে যে সঞ্চালন বা আবিষ্ট বক্রচলন দেখা যায়, তাকে ফটোন্যাস্টিক চলন বলে। যেমন – সূর্যমুখী ফুল দিনের বেলায় প্রখর সূর্যালোকে ফোটে এবং রাতের অন্ধকারে মুদে যায়।
প্রশ্নঃ থার্মোন্যাস্টিক চলন কাকে বলে ?
উত্তরঃ
উষ্ণতার তারতমের ওপর নির্ভর করে উদ্ভিদ অঙ্গের যে সঞ্চালন বা বক্রচলন হয়, তাকে থার্মোন্যাস্টিক চলন বলে। যেমন – টিউলিপ ফুলের পাপড়ি বেশি উষ্ণতায় ফোটে ও কম উষ্ণতায় বন্ধ হয়ে যায়।
প্রশ্নঃ কেমোন্যাস্টিক চলন কাকে বলে ?
উত্তরঃ
কোনো রাসায়নিক পদার্থের তীব্রতার প্রভাবে উদ্ভিদ অঙ্গের রসস্ফীতিজনিত আবিষ্ট বক্র চলনকে কেমোন্যাস্টিক চলন বলে। যেমন – সূর্যশিশির পাতার কিনারা বরাবর রোম বা কর্ষিকা এবং কলসপত্রী উদ্ভিদের পত্রফাঁদের ঢাকনা পতঙ্গের দেহের প্রোটিনের সংস্পর্শে আসা মাত্রই পতঙ্গের দিকে বেঁকে যায় এবং পতঙ্গকে আবদ্ধ করতে সক্ষম হয়।
প্রশ্নঃ সিসমোন্যাস্টিক চলন কাকে বলে ?
উত্তরঃ
স্পর্শ, আঘাত বা বায়ুপ্রবাহের তীব্রতার প্রভাবে উদ্ভিদ অঙ্গের রসস্ফীতিজনিত আবিষ্ট বক্র চলনকে সিসমোন্যাস্টি চলন বলে। যেমন – লজ্জ্বাবতী পাতার পত্রকগুলি স্পর্শ করলে নুয়ে পড়ে।
প্রশ্নঃ প্রকরণ চলন কাকে বলে ?
উত্তরঃ
উদ্ভিদ অঙ্গের রসস্ফীতির তারতম্যের জন্য যে বক্রচলন দেখা যায়, তাকে প্রকরণ চলন বলে। যেমন – বন চাঁড়াল গাছের ত্রিফলকের পার্শ্বফলক দুটির পত্রকমূলে রসস্ফীতি চাপের তারতম্যের জন্য পত্রকদুটি ওপরে ও নীচে ওঠানামা করে।